ডেস্ক নিউজ : খুলনা জেলা বিএনপি’র কমিটি ঘোষণার পর থেকে সকল মহলে প্রশংসায় ভাসছে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তারুণ্যের শক্তিতে বদলে যাবে খুলনা জেলা বিএনপি, এমনটি আশা নেতৃবৃন্দের। তৃণমূল থেকে উঠে আসা দু’জন দক্ষ ছাত্রনেতা এ কমিটিতে থাকায় উচ্ছসিত মাঠের নেতা-কর্মীরা। তার সঙ্গে রয়েছেন খুলনার আদালত অঙ্গনের অভিজ্ঞ জনপ্রিয় এক সিনিয়র আইনজীবী। দলের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উন্নত এবং নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিএনপিকে যেভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন, রাজনীতির মাঠে যেসকল দল বা সংগঠনের মুখোমুখি হতে যেমন দক্ষ সংগঠক প্রয়োজন। তা এই দু’জন ক্লিন ইমেজের সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিবের মধ্যে সে সাংগঠনিক দক্ষতা এবং যোগত্যা রয়েছে। স¤প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহবায়ক হয়েছেন জেলা ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক সভাপতি এবং বিগত দিনে জেলা বিএনপি’র একাধিক গুরত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী মনিরুজ্জামান মন্টু। আর সদস্য হয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, সদ্য বিদায়ী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক অনলবর্ষী বক্তা সাবেক ভিপি আবু হোসেন বাবু।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপি নবীণ-প্রবীণ একাধিক নেতা জানান, বর্তমান কমিটির আহŸায়ক ও সদস্য সচিবের মধ্যে যে সাংগঠনিক দক্ষতা এবং যোগত্যা রয়েছে। যা বিগত দিনে তাদের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস থেকে প্রমাণ মেলে। এক কথায় বলা যায়, খুলনা জেলা এবং মহানগরের মধ্যে এমনকি আশে-পাশের জেলায়ও এ কমিটি প্রশংসিত হয়েছে। কেননা সাংগঠনিক দক্ষতা হিসেবে এই দুই নেতা অতীতে সকল কমিটিতে সফলতা দেখিয়েছেন। তার সঙ্গে রয়েছে পরিচ্ছন্ন ইমেজ ও কর্মীবান্ধব নেতার পরিচয়।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহবায়ক মোলা মোশররফ হোসেন মফিজ বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন উন্নত এবং নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। দলের উপর নির্দেশনা হলো বিএনপিকে এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে জনগণের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হয়। তার মতে তারেক রহমানের স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণে খুলনা জেলায় এ দুই নেতার মাধ্যমে সফল হবে। তিনি মনে করেন, এই কমিটি আগামীতে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি গড়ে দলকে জনগণের কাছে নিয়ে যাবে। তিনি দুই নেতার প্রতি আস্থা রেখে বলেন, তাদের দক্ষতা আর তারুণ্যের শক্তি দলকে সুসংগঠিত করবে।
খুলনা জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, বর্তমান কমিটির আহŸায়ক ও সদস্য সচিব ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটে সফলতার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে আজ এ পর্যায়ে এসেছেন। তারা দু’জনই আমার অনুজপ্রতিম। দলের উপর নানামুখি চাপের মাঝেও তারা দল ছেড়ে যাননি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আবার তৃণমূলেও রয়েছে জনপ্রিয়তা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নিয়েছেন।
খুলনা জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব আবু হোসেন বাবু বলেন, আমরা জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চাই। আমরা ওয়ার্ড থেকে শুরু করে থানা ও জেলায় সুন্দরভাবে সফল সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একটি গণমুখী খুলনা জেলা কমিটি উপহার দিতে চাই।
তিনি বলেন, খুলনা জেলা বিএনপি’র প্রথম আহŸায়ক জজ আমির আলি জোয়াদ্দার মেধা, প্রজ্ঞা, মনন ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা নেতৃত্বে আসতে চাই। আমরা কোনো চোরা গলি পথ ধরে ব্যক্তিগত বাহিনী বানিয়ে নেতা হতে চাই না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনিরুজ্জামান মন্টু এবং আবু হোসেন বাবুকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা বিশ্বাস, আস্থা ও ঈমানের সাথে সে দায়িত্ব আমরা পালন করবো।
তিনি আরো বলেন, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে একটা কর্ম পরিকল্পনা ও গোল নির্ধারণ করেছি। শুধু দলীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে থাকবো না। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে আমরা সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। ইমাম পরিষদ, তাবলীগ জামাত, ওয়াজ মাহফিল, মসজিদে ও বিভিন্ন এলাকার বাজারে আমাদের উপস্থিতিতে আমরা মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে যাচ্ছি। জেলা কমিটি হবার পর থেকে আমরা খেলাধূলাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদ ও জিয়াউর রহমান ফুটবল টুর্নামেন্টর মতো নানা সামাজিক ও বিনোদন মূলক কাজ করে যাচ্ছি। যাতে করে যুব সমাজ বিপদগামী না হয়। মোট কথা বিএনপিকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।
খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, আমাদের সর্বপ্রথম লক্ষ্য ও উদ্যেশ্য হলো দলকে জনগণের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তোলা। জনগণ যাতে করে আস্থা পায়, আ’লীগ যে ধরনের সংগঠন বিএনপি সে ধরনের সংগঠন নয়। বিএনপি মানুষের নিরাপত্তা ও আস্থার একটা প্লাটফর্ম। এ বিষয়টি মানুষের কাছে যাতে করে স্পষ্ট থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের যে নির্দেশনা দেবেন আমরা তা বাস্তবায়ন করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো। আমাদের বিগত দিনের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে সংগঠনকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করতে হলে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করতে হলে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক ভাবে অগ্রসর হতে হবে। একটা রাজনৈতিক দলের মূল নেতৃত্ব বা সর্বস্তরের নেতৃত্বের কথাবার্তা আচার-আচরণ যদি জনগণের কাছে প্রিয় হয় তক্ষণি সেই রাজনৈতিক দলটি মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয় এটা আমরা ধারণ করি।
মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, দেশের দলগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ দল হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এখানে প্রতিটা ইউনিটের এক এক পদের জন্য বহু প্রার্থী আছে। কিছু পদের জন্য ১০ জন প্রার্থীও আছে। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। এই প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভবিষ্যতে যাতে ভিন্ন রুপ ধারণ না করে, সে জন্য আমাদের কমিটি ঘোষণা হবার পর থেকে কাজ শুরু করেছি। জেলার প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আমদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই খুলনা বিএনপিকে আমরা জনগণের দল হিসেবে পরিণত করতে পারবো।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের যে নির্দেশনা দেন, আমরা সে নির্দেশনা অনুসরণ করবো। আমরা আমাদের দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো। আমরা এক চোখা হবো না। বিএনপি’র সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা যার যে যোগত্যা ও রাজনৈতিক অবস্থান এবং সমাজের গ্রহণ যোগত্যা অনুযায়ী তাদের বিভিন্ন পদে পদান্নতি করা হবে। ৫ আগস্টের পরে দলের কিছু ব্যক্তির কারণে যে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে এবং কিছু অপপ্রচারও হয়েছে। এটা আমরা ক্ষতিয়ে দেখবো। যদি কারো বিরুদ্ধে প্রমাণ মেলে তবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেবো।
সবশেষ তিনি বলেন, অনেকেই ভোল পাল্টে বিএনপিতে ঢুকতে চায়। আমরা যতদিন আছি স্বৈরাচারের দোসররা বিএনপিতে ঠাঁই পাবে না। ছাত্র-জনতা যে স্বৈরাচারকে বিদায় করেছে তাদের দোসরদের দলে ঠাঁই দিলে বিএনপি’র শুধু সম্মান হানি হবে না। বিএনপি অজনপ্রিয় হয়ে যাবে। আমরা এটা মাথায় রেখেই অগ্রসর হবো। যারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী এবং আওয়ামী লীগের পারপাস সার্ভ করেছে আমরা তাদেরকে দলে ঠাঁই দেব না। বিএনপি’র প্রতি আস্থা ও জিয়া পরিবারের প্রতি আনুগত্বকে আমরা অগ্রাধিকার দিতে চাই।
উলেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আ’লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন কারণে ১৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপি’র গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। প্রায় তিন মাস কমিটি ছাড়া খুলনা জেলা বিএনপি’র কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে। গত ১৩ ডিসেম্বর খুলনা জেলা বিএনপি’র আংশিক আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন দলটির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে জেলা বিএনপির আগের আহবায়ক কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য মনিরুজ্জামান মন্টুকে আহবায়ক ও জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক আবু হোসেন বাবুকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কয়রা উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক মোঃ মোমরেজুল ইসলামকে যুগ্ম-আহবায়ক করা হয়েছে।
Leave a Reply