মাও: মুহা: ফজলুর রহমান : ইসলামে গীবত বা পরনিন্দা করাকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বলে ঘোষণা করে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত শোনাও অন্যায়। গীবত মদপান, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ইত্যাদি থেকেও মারাত্মক ও নিকৃষ্টতম। কেননা এসব পাপ তওবার দ্বারা ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু গীবতকারীর পাপ শুধু তওবা করলেই তা মাফ হবে না, বরং যার বিরুদ্ধে গীবত করা হয়েছে সে ব্যক্তি যদি মাফ করে তাহলেই আল্লাহর কাছে মাফ পাওয়া যাবে। গীবত আরবি শব্দ। যার অর্থ পরনিন্দা। ইসলামের পরিভাষায় কারও অনুপস্থিতিতে তার কোনো দোষ-ত্রুটি অন্যের কাছে আলোচনা করাই গীবত। যদিও তার মধ্যে ওই দোষগুলো বিদ্যমান থাকে। মহানবী (সাঃ) জনৈক সাহাবীর প্রশ্নের জবাবে বলেন- ‘গীবত হচ্ছে যা শুনলে তোমার ভাইয়ের খারাপ লাগবে, তা নিয়ে আলোচনা করার নামই গীবত। ’ এতে ওই সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করেন, আমি যা বলছি তা যদি ওই ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবু কি তা গীবত হবে? তখন মহানবী (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘যদি তার মধ্যে ওই দোষগুলো থাকে তাহলেই তো গীবত হবে আর তা না থাকলে সেটা হবে তোহমত যার অর্থ অপবাদ। তবে কয়েকটি ক্ষেত্র এমনও আছে, যেখানে শরীয়ত গীবত করার অনুমতি দিয়েছে। যেমন, কোনো মুসলিমকে ক্ষতি থেকে বাচানোর ইচ্ছা থাকলে সেক্ষেত্রে গীবত করা জায়েয। উদাহরণত, এক ব্যক্তি আপনার কাছে এসে বললো যে, অমুক ব্যক্তি আমার মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছে। আপনার দৃষ্টিতে লোকটি কেমন? এমতাবস্থায় যদি আপনার নিকট তার মধ্যে এমন আপত্তিকর বিষয় থেকে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে আপনার উচিত- তাকে সে বিষয়ে অবহিত করা। যাতে তার মেয়ে ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়। এক্ষেত্রে যদিও অন্যের পেছনে তার নিন্দা করা হচ্ছে এবং আপাতদৃষ্টিতে তা গীবতের মধ্যেই পড়ে, কিন্তু তবুও শরীয়ত এটাকে জায়েয রেখেছে। অথবা এক ব্যক্তি প্রতারক। সে মানুষকে ঠকিয়ে পয়সা নেয় । আপনি যদি মানুষকে তার সম্পর্কে সাবধান করেন এবং বলে দেন যে, তার সাথে যেন সতর্কতার সাথে লেনদেন করে। কেননা, তার লেনদেন স্বচ্ছ নয়, তবে এটাও নিষিদ্ধ গীবতের মধ্যে পড়বে না। যেহেতু এর দ্বারা অন্যকে ক্ষতি থেকে বাঁচানোই উদ্দেশ্য। সুতরাং যেক্ষেত্রে অন্যকে সতর্ক করার প্রয়োজন দেখা দেয় অথবা অন্যকে দুনিয়া বা আখেরাতের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা উদ্দেশ্য থাকে, সে ক্ষেত্রে অন্যের দোষ বর্ণনা দূষণীয় নয় এবং তা গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে না। জনসাধারণের নিকট প্রসিদ্ধ আছে যে, ফাসেক ও পাপী ব্যক্তির গীবত করা জায়েয। কিন্তু সাধারণভাবে এ কথা ঠিক নয়; বরং নেককার লোকের গীবত যেমন জায়েয নেই তেমনই বদকারের গীবতও জায়েয নেই। কেউ কোনো গুনাহ প্রকাশ্যে করলে এবং তা এমন নির্লজ্জভাবে যে, সে জন্য তাকে ভালো-মন্দ যাই বলা হোক না কেন তার কোনো পরওয়া সে করে না। নির্দিষ্ট সেই গুনাহের কথা তার অনুপস্থিতিতে বলা জায়েয। উদাহরণত, এক ব্যক্তি প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে এবং তা সকলকে জানিয়েই করে। এখন আপনি যদি তার আড়ালে বলেন যে, অমুক ব্যক্তি মদখোর। তবে তা জায়েয হবে। কেননা, আপনার এ গীবত করাতে সে কোনো কষ্ট পাবে না। সে নিজেই তো জানিয়ে বেড়াচ্ছে যে, আমি মদ খাই। তাই এটা নিষিদ্ধ গীবতের মধ্যে পড়বে না।কিন্তু সেই বেক্তি যে গুনাহ প্রকাশ্যে নয়; বরং গোপনে করে এবং সে এই গুনাহের সাথে যুক্ত করে তার নাম প্রচার করা হোক সেটা তার পছন্দ নয়। সে ব্যক্তি এরকম প্রচারণায় দুঃখিত হয়। তার এই গুনাহের কথা তার অগোচরে বলাবলি করলে কিছুতেই তা জায়েয হবে না। যদিও ঘটনা সত্য হোক না কেন। কেননা, এটা নিষিদ্ধ গীবতের অন্তর্ভুক্ত এবং সে কারণে এটা হারাম। তাই সকলের মুখে লাগাম পরাতে হবে। অন্যথায় তা আপনাকে গীবতের গুনাহে লিপ্ত করবে। মনে রাখতে হবে, গীবত নিজে করা যেমন হারাম, তেমনি অন্যের গীবত শুনাও হারাম।
সহকারী প্রধান শিক্ষক, পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা, খতীব বায়তুল আমান জামে মসজিদ, চকমাথুরাবাদ, হরিণটানা, খুলনা।
Leave a Reply