ডেস্ক নিউজ : খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। স্বেচ্ছায় চাকুরি থেকে পদত্যাগের আবেদন করেছেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিহির রঞ্জন হালদার। এদিকে নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রো-ভিসি, দুইজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারসহ ৯ জনকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে। এ তালিকা আরও বাড়তে পারে। এ ঘটনায় কুয়েটের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যারা বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে এমন সাঁড়াশী অভিযান চলবে বলে কুয়েটের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ, জাল সার্টিফিকেট দিয়ে নিয়োগসহ নানান অনিয়মের কারণে ৯ জন জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বুধবার সকলকে চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন কুয়েট কর্তৃপক্ষ। এই তালিকায় রয়েছেন কুয়েটের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. সোবহান মিয়া, সিএসই বিভাগের প্রফেসর ড. পিন্টু চন্দ্র শীল, ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিমাই চন্দ্র মিস্ত্রী দোলন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার দিবাশীষ মন্ডল, জনসংযোগ ও তথ্য শাখার সহকারী পরিচালক মনোজ কুমার মজুমদার, সহকারী কম্পোটলার জি এম আবু সাইদ, সহকারী প্রোগ্রামার ওমর ফারুক, সহকারী টেকনিক্যাল অফিসার মেহেদী হাসান রাজন এবং পিয়ন সত্যজিৎ কুমার দত্ত। এই তালিকায় আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
কুয়েটের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ ৫ আগস্টের পর দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ২০০৭ সালের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে উপাচার্যের নির্দেশে অনেকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে উপাচার্যের দপ্তরে। অভিযোগ তদন্ত করার জন্য প্রফেসর ড. আশরাফুল গণি ভূঁইয়াকে সভাপতি এবং রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আনিছুর রহমানকে সদস্য সচিব করে ছয় সদস্যেও কমিটি গঠন করেন। পরবর্তীতে তদন্তের সাপেক্ষে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয় গত ২১ নভেম্বরের সিন্ডিকেট সভায়। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের সভার অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ শুরু হয়।
এদিকে কুয়েটের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিহির রঞ্জন হালদার এবং শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. শিবেন্দ শেখর শিকদার গত ২৪ নভেম্বর স্বেচ্ছায় চাকুরি থেকে পদত্যাগ করে লিখিত ভাবে আবেদন করেছেন।
আরও জানা যায়, কুয়েটের সাবেক আরেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেনসহ আর দুই ডজন শিক্ষকসহ একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কুয়েট থেকে অপসারণের দাবিতে গত দেড় মাস ধরেই উত্তপ্ত ছিল কুয়েট। উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে এবং কুয়েট মেইন গেটে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ অবস্থান করেন। এমনকি প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেনকে উদ্দেশ্যে করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ঝাড়ু মিছিলও অনুষ্ঠিত হয়। সকলের দাবি স্বৈরাচারীদের কুয়েটে কোন অবস্থান থাকবে না। পাশাপাশি সকল অনিয়ম করে নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করতে হবে।
কুয়েটের ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিমাই চন্দ্র মিস্ত্রী দোলন ও সহকারী পরিচালক মনোজ কুমার মজুমদার জানান, তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এমন চিঠি তারা পেয়েছেন। তারা আরও বলেন, অভিযোগ তদন্ত করলেও আমাদের কাছে কোন ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি।
সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মিহির রঞ্জন হালদারকে মুঠোফোনের মাধ্যমে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, যেসকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছিল, সেগুলো তদন্ত করার পর সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়েই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কুয়েটে কোন দুর্নীতি ও অনিয়মকে প্রশয় দেওয়া হবে না।
Leave a Reply