মাওঃ মুহাঃ ফজলুর রহমানঃ কারো অনুপস্থিতে তার দোষ বর্ণনা করাকে ‘গীবত’ বলে। যদি তার মধ্যে সেই দোষ থাকে তবে তা ‘গীবত, আর যদি সে দোষ না থাকে, তবে তা হবে ‘অপবাদ’। ‘অপবাদ’ গীবতের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। মুখে বলার দ্বারা যেমন গীবত হয়, তেমনিভাবে অঙ্গভঙ্গী ও ইশারা-ইঙ্গিতের দ্বারাও গীবত হয়। যেমন কেউ হাতের সাহায্যে বুঝালো যে, অমুক খুব বেটে (খাটো)। পা বাঁকা করে বুঝালো যে, অমুক ল্যাংড়া ইত্যাদি। এরূপ ইশারা-ইঙ্গিতও গীবতের অন্তর্ভুক্ত।এমনিভাবে কারো আমল-আখলাক, বুদ্ধি-বিবেক, পোশাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা, উঠাবসা, শারীরিক গঠন, ইত্যাদি যে কোনো বিষয়ের দোষ বর্ণনা করা গীবত। যেমন কেউ বললো- আরে, অমুকতো খুব বদ-আমলী, বেকুফ, ভিতরটা খারাপ ইত্যাদি। এসবও গীবতের অর্ন্তভূক্ত।অনুরূপভাবে জীবিত মানুষের গীবত করা যেমন হারাম, তেমনিভাবে মৃত মানুষের গীবত করাও হারাম। গীবত করা ও স্বেচ্ছায় গীবত শ্রবণ করা উভয় সমান গুনাহ । মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো, সে কখনো গীবত শোকায়েত করে না এবং শুনেও না। কারণ গীবত করা ও শোনা উভয়ই সমান। এক হাদীসে নবী কারীম (সাঃ) ‘গীবতকে যিনার চেয়েও মারাত্মক বলেছেন। তিনি বলেন- গীবত যিনার চেয়েও মারাত্মক। (মিশকাত-৪৮৭৪)পবিত্র কুরআনে গীবতকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-“তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো তা ঘৃণাই করো” (সূরা হুজুরাত-১২)এর দ্বারা বুঝা যায় যে, মৃত মানুষের গোশত খাওয়া যেমন হারাম ও অত্যন্ত নিকৃষ্ট কাজ, তেমনিভাবে কারো অনুপস্থিতিতে তার গীবত করাও হারাম ও নিকৃষ্ট কাজ ।গীবত কখনো অহঙ্কার থেকে, কখনো ক্রোধ থেকে, কখনো সম্মানের মোহ থেকে, আবার কখনো হিংসা-বিদ্বেষ থেকে সৃষ্টি হয়। যে কারণেই হোক না কেন তা নির্ণয় করে দূর করা ফরয। কেননা, গীবতকারী কখনো আল্লাহর ওলী হতে পারবে না। এমনকি সে পাক্কা মুমিনও হতে পারবে না।গীবতকারীর কবরেও শাস্তি হবে।হযরত আবু বকর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী কারীম (সাঃ) দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেনঃ নিশ্চয় এ দুটি কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে এদেরকে কঠিন কোনো অপরাধের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। বরং এদের একজনকে পেশাবের (অসতর্কতার) কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে এবং অপরজনকে গীবত-শেকায়েত করার কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। (বুখারী-২১৬, ২১৮, ১৩৬১ মুসলিম-২৯২, ৫৬৪) তাছাড়াও গীবতের নিম্মোক্ত ক্ষতি হয়ে থাকে – (১). গীবতকারীর দুআ কবুল হয় না। (২). গীবতকারীর চেহারা থেকে নূর চলে যায়। (৩). গীবতকারীর আমলনামা থেকে নেকী কেটে নিয়ে যার গীবত করা হয় তাকে দেয়া হয়। (৪). যার গীবত করা হয় তার গুনাহ গীবতকারীর আমলনামায় চলে যায়।আল্লাহ পাক আমাদেরকে গীবতের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক, পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা, খতীব বায়তুল আমান জামে মসজিদ, চকমাথুরাবাদ, পিপড়ামারী, হরিণটানা, খুলনা।
Leave a Reply