ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান
‘আমার নামের সঙ্গে দেশনায়ক রাষ্ট্রনায়ক ব্যবহার করবেন না’

প্রকাশিতঃ নভেম্বর ২০, ২০২৪, ১৪:১৬

ডেস্ক নিউজ : বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, দয়া করে আমার নামের সঙ্গে কেউ দেশনায়ক বা রাষ্ট্রনায়ক জাতীয় শব্দ ব্যবহার করবেন না। মঙ্গলবার বিএনপি আয়োজিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি এমন একটি দল যারা অতীতে দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে হয়নি। আমরা সবাই জানি, অনেকেই বলেছেন বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারলে, জনগণের চাওয়া অনুযায়ী কাজ করতে পারলে, আগামী দিনে বিএনপিই সরকার গঠন করবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা নির্ভর করছে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর। আমাদের এই ৩১ দফা হলো ভবিষ্যতে আমরা কীভাবে দেশ পরিচালনা করব, তার রূপরেখা। এটা প্রথমে ছিল ২৭ দফা। পরে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যেসব দল শরিক ছিল, তাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ, এটা শুধু বিএনপি’র নয়, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সব দলের সম্মিলিত চিন্তার ফসল।’ ‘অনেকেই অনেক সংস্কারের কথা বলছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দেশ-জাতি নিয়ে চিন্তা বহু আগে থেকে করছি। যখন কেউ চিন্তাই করেনি, সে সময় দেশের মানুষের সামনে ২৭ দফা ও পরে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছে। আমরা বারবার বলেছি, ভালো প্রস্তাবনা এলে ৩১ দফার সঙ্গে গ্রহণ করা যাবে,’ যোগ করেন তিনি।

ভার্চুয়াল বক্তব্যে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘এই ৩১ দফাকে দেশের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জনসভা করে নয়, ছোট ছোট উঠান বৈঠক করে গ্রামে গ্রামে ইউনিয়নে ইউনিয়নে গিয়ে মানুষকে জানাব।’ ‘আমি কয়েকদিন আগে এক বক্তব্যে বলেছিলাম, জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি না হলে তাহলে যেই সংস্কার করি, কাজে লাগবে না,’ বলেন তিনি।

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণেরর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এরজন্য ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পৃথিবীর যেকোন গণতান্ত্রিক দেশে, ভোটের মাধ্যমে জবাবদিহিতা তৈরি হয়।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের কথা বলার অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, ভোট প্রদানের অধিকারের জন্য আমাদের হাজারো সহকর্মী গুম হয়েছেন, খুন হয়েছে। ৬০ লাখের বেশি মিথ্যা মামলার স্বীকার হয়েছেন আমাদের নেতা-কর্মী। আমরা এই যুদ্ধ করছি বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কাজেই আমাদের যেকোনো মূল্যে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে।’ ‘তাই আমরা একটি কথা বলছি ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। আপনারা নিশ্চয় গত কয়েকদিনের পত্রিকার, বিভিন্ন খবর অবগত। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আপনারা পোড় খাওয়া প্রত্যেকটি মানুষ। কাজেই আপনারা নিশ্চয় বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন যে কোথাও কিছু একটা ষড়যন্ত্র চলছে। কাজেই জনগণকে সচেতন করতে হবে। জনগণের সাথে থাকতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

সবশেষে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সহকর্মী হিসাবে আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ ও নেতা হিসেবে আপনাদের কাছে নির্দেশ যে, আজকের পর থেকে দয়া করে আমার নাম যখন কেউ বলবেন, দেশনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক এই কথাগুলো কথাগুলো দয়া করে কেউ ব্যবহার করবেন না।’

তিতুমীর কলেজের ছাত্রদলের একনেতার বক্তব্য উদ্ধৃত করে তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয়, তাহলে যে সংস্কারই করি, কোনোটিই কাজে লাগবে না। রাজনৈতিক মুক্তি হচ্ছে জনগণের কাছে জবাবদিহি। যার যা ইচ্ছা করে যাবে, সেটা হবে না। সেটা সরকারি দল হোক, বিরোধী দল, এমপি হোক, মন্ত্রী হোক, জনগণের কাছে এর জবাব দিতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে হলে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ ভোটের মাধ্যমেই জবাবদিহি তৈরি হয়, বলে উলে­খ করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

কর্মসংস্থানের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশে এক কোটির বেশি বেকার রয়েছেন। আমাদের গার্মেন্টস ও রেমিট্যান্সের বাইরে নতুন সেক্টর তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি করার সুযোগ আছে। আমি চেষ্টা করি, অত দ্রুত পারবো না। অনেকাংশে সমস্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো। রাতারাতি সব হবে না। দেশ সবার, প্রত্যেকের অবস্থান থেকে একটু একটু এগিয়ে আসি। প্রত্যেকে যদি চেষ্টা করি ইনশাআল­াহ, ভালো কিছু করতে সক্ষম হবো।’

প্রশিক্ষণ সভায় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বক্তৃতা করেন। মতামত প্রদান করেন ঢাকা বিভাগীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

Leave a Reply