মাওঃ মুহাঃ ফজলুর রহমানঃ
মুমিনের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাতের অনুসরণ-অনুকরণেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি, সফলতা, কামিয়াবি, নাজাত ও মুক্তি। জগতে যে যত বেশি সফলতা লাভ করেছে সে সুন্নতের পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমেই সফলতা লাভ করেছে। মুসলমানদের জীবনে প্রতিটি অধ্যায়ে নবীজি (সাঃ) এর সুন্নাত বিদ্যমান রয়েছে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন এবং সাংস্কৃতিক জীবনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে মহানবী (সাঃ) এর সুন্নাত তথা উত্তম আদর্শ রয়েছে। সুন্নাতে নববীতে রয়েছে উম্মতের জন্য হেদায়ত, হেফাজত, রহমত, বরকত, তথা উন্নতি অগ্রগতির ভান্ডার। কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমরা আজ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মনোনীত এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রদর্শিত সুন্নাত হতে বহু দূরে। আমাদের দায়িত্ব ছিল সর্বাবস্থায় নবীজী (সাঃ) এর আদর্শ কে আঁকড়ে ধরা এবং পরিপন্থী সব কিছু বর্জন করা। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, (হে ঈমানদারগণ) রাসুল (সাঃ) তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা আঁকড়ে ধরো এবং যা কিছু তিনি নিষেধ করেছেন তা বর্জন ও পরিহার করো”। (সূরা হাশর, আয়াতঃ ৭) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে নবী! আপনি বলে দিন যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসতে চাও, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ মাফ করে দিবেন। (সূরা আল ইমরান, আয়াতঃ ৩১) অর্থাৎ সুন্নাত তরিকা আনুসরণ করলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ভালোবাসবেন। আর আল্লাহকে ভালোবাসলে তার সৃষ্টি চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির আবাসস্থল জান্নাত আমাদের হবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি ফিতনা-ফাসাদের যামানায় সুন্নাতের ওপর অবিচল থাকবে, সে শত শহীদের নেকি লাভ করবে। (বায়হাকী) অন্যত্র বলেন, যে আমার সুন্নাত কে ভালোবাসে সে যেন আমাকে ভালোবাসলো। আর যে আমাকে ভালোবাসলো সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (মিশকাত) সুন্নাতের তাগিদ দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিদায় হজে¦র ভাষণে বলেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে গেলাম, যদি তোমরা সে দুটি জিনিস শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে রাখো তাহলে তোমরা কখনো গোমরাহ হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব আরেকটি হলো আল্লাহর রাসূলের সুন্নাত। (আল মুসতাদরাক) অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা:) ফরমান, আমার খলিফাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার রহমত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন হে রাসূল ! আপনার খলিফা কারা ? জবাবে বললেন, যারা আমার সুন্নাতকে (নিজে আমল করার মাধ্যমে) যিন্দা করে এবং মানুষদেরকে শিক্ষা দেয়। (কানযুল উম্মাল) তাই একজন মুমিন হিসাবে দৈনন্দিন জীবনে সর্বক্ষেত্রে সুন্নাতের অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার কাছে ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নবীজির তরীকাকে মাপকাঠি রূপে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইশরাদ করেছেন,“ বলুন তোমরা আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করো”। (সূরা আল ইমরান, আয়াত ৩২) বুঝা যাচ্ছে, যে কোন আমল তখনই নেক আমল রূপে সাব্যস্ত হবে যখন তা আল্লাহর আদেশ এবং রাসূল (সা:) এর সুন্নাত মোতাবেক হবে। হযরত সালমা ইবনে তাকওয়া (রা:) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা:) এর সামনে বামহাত দিয়ে খাবার খাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা:) তাকে বললেন তুমি ডান হাত দিয়ে খাও। সে বলল, আমি ডান হাত দিয়ে খেতে পারি না। অথচ সে অহংকারের কারণেই বাম হাত দিয়ে খাবার খাচ্ছিল। তখন রাসূল (সা:) বললেন তুমি আর পারবেও না। বর্ণনাকারী বলেন, ঐ ব্যক্তি আর কখনো তার ডান হাত মুখে উঠাতে পারেনি। (মুসলিম),সুতরাং একজন মুমিনের জীবনে প্রতিটি পদক্ষেপে একটি মাত্র চিন্তা যদি তার মনের মধ্যে দানা বাঁধতে পারে যে, আমি যে কাজটি করতে যাচ্ছি, তা রাসুল (সাঃ) সুন্নাহ সম্মত কি না? বা আমার কাজটি প্রিয়নবীর সুন্নাহর খেলাপ হয়ে যাচ্ছে কি না? শুধু এতটুকু প্রশ্ন কারও বিবেক করতে শিখলে, তাহলে আশা করা যায় সে ব্যক্তির জীবনে সুন্নাহর খেলাপ কোনো কাজ হবেনা। আর যদি কেউ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাহকে প্রাধান্য দিতে পারে, সে হবে খাঁটি আল্লাহওয়ালা। আর কেউ আল্লাহওয়ালা হলে, তাঁর জীবনে থাকবে না কোনো ভয় ও পেরেশানি। হে মহান আল্লাহ! আমাদের সকল কে সুন্নাহর গুরত্ব বুঝে নিজের জীবনকে সুন্নাহ দ্বারা সজ্জিত করার তৌফিক দান করুন,আমীন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক, পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা, খতীব বায়তুল আমান জামে মসজিদ, চকমাথুরাবাদ, পিপড়ামারী, হরিণটানা, খুলনা।
Leave a Reply