কুরআন সুন্নাহর আলোকে স্ত্রীর অধিকার

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ৩১, ২০২৪, ১৬:৩৪

মাওঃ মুহাঃ ফজলুর রহমানঃ

মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন মহিলার ওপর রুষ্ট হবে না, কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার ওপর সে সন্তুষ্ট হতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৯) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নারীদের প্রতি ভালো আচরণের উপদেশ দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮৪)

অন্য হাদিসে রয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২) ইসলামী শরিয়তে স্বামীর ওপর স্ত্রীর জন্য যে অধিকার সাব্যস্ত করেছে, তার সার কথা হলো : ১. পূর্ণ মোহরানা আদায় করে দেওয়া, ২. প্রয়োজনমাফিক অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ভালো ব্যবস্থা করা; ৩. স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ করা; ৪. মাঝেমধ্যে মাহরাম আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া, ৫. প্রয়োজনমাফিক দ্বিন শেখানোর ব্যবস্থা করা; ৬. ইসলামী শরিয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখা, ৭. প্রয়োজনমতো সহবাস ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করা ইত্যাদি। (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯; আল-কাবায়ের, জাহাবি, পৃষ্ঠা ১৭৫) পূর্ণ মোহরানা আদায় করে দেওয়াঃ বিবাহের পর কোনো ওজর ছাড়া মোহরানা আদায়ে কালবিলম্ব করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেকেই মনে করে, মহর শুধু কাগজে লেখার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ, তা বাস্তবে আদায় করতে হয় না, শুধু বিবাহ ভেঙে গেলে তা পুরুষপক্ষ থেকে মহিলাপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে আদায় করে নিতে হয়—এ ধারণা ও কর্মপন্থা সম্পূর্ণ ভুল। বরং মোহরানা আদায়ের নিয়তবিহীন শুধু কাগজে লেখার জন্য মোহরানা নির্ধারণ করা মারাত্মক অন্যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা নারীদের সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মহর দিয়ে দাও।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে পুরুষ কোনো নারীকে বিয়ের সময় মোহরানা নির্ধারণ করে, তবে আল্লাহ তাআলা তার অন্তরের খবর জানেন যে তার তা আদায় করার নিয়ত নেই। ফলে সে আল্লাহর হকের মধ্যে ওই নারীকে ধোঁকা দিল এবং তার লজ্জাস্থানকে অন্যায়ভাবে ভোগ করল। এমন ব্যক্তি কেয়ামতের দিবসে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ব্যভিচারী হিসেবে।’(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৮৯৩২) স্ত্রীর ভরণ-পোষণের অধিকারঃইসলামী শরিয়ত মতে, বিবাহের পর থেকেই স্বামীর ওপর স্ত্রীর জন্য যেসব অধিকার সাব্যস্ত হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো স্ত্রীর ব্যয়ভার গ্রহণ করা। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সন্তানের পিতার ওপর সন্তানের মায়ের জন্য অন্ন-বস্ত্রের উত্তম পন্থায় ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৩)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)

হাদিস শরিফে স্ত্রীদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে, তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪২, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৮৫০১)

ভরণ-পোষণের পরিমাণ : ভরণ-পোষণের ব্যাপারে শরিয়ত নিরেট পরিমাপ নির্ধারিত করে দেয়নি। বরং ইসলামী শরিয়তের ভাষায় স্ত্রীকে প্রয়োজন পরিমাণ ভরণ-পোষণ দেওয়া স্বামীর কর্তব্য। এর পরিমাণটি পরিবেশ-পরিস্থিতি, অবস্থা ও স্বামীর সামর্থ্যনির্ভর। (আল মুহিতুল বুরহানি : ৩/৫২৯-৫৩০, ফাতহুল কাদির : ৩/১৯৪)মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে দীর্ঘ বয়ানের একপর্যায়ে বলেছিলেন, ‘অতএব, তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো, কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে গ্রহণ করেছ এবং তোমরা আল্লাহর হুকুমেই তাদের লজ্জাস্থানকে হালাল হিসেবে পেয়েছ…।’(সহিহ মুসলিম : হাদিস ১২১৮)

সহকারী প্রধান শিক্ষক পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা, খতীব বায়তুল আমান জামে মসজিদ , চকমাথুরাবাদ, পিপড়ামারী, হরিণটানা, খুলনা।

Leave a Reply