সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার থামছে না

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ২০, ২০২৪, ১৩:১৬

ডেস্ক নিউজ : সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার কয়েকটি খালে বিষ দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছেন স্থানীয়রা প্রভাবশালীরা। তাদের দাপটে বাদ পড়ছে না সুন্দরবনের প্রবেশ নিষিদ্ধ (অভয়ারণ্য) এলাকাও। অভিযোগ উঠেছে, বন বিভাগের অসাধু কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে চুক্তি করে এমন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সুন্দরবনের পেশাজীবীদের ভাষ্য, অভয়ারণ্য এলাকার খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করায় অন্য খাল থেকে শিকারের জন্য মাছ পাচ্ছেন না সাধারণ জেলে বাওয়ালীরা।
কথা হয় ৫ নম্বর কয়রা গ্রামে বাড়ি জেলে আব্দুল বারীর সাথে। তাঁর অভিযোগ, ‘নিষিদ্ধ এলাকায় আমরা ঢুকতি না পারলেও দাদন ব্যবসায়ীরা লোক ঢুকায়। তারা বনে ঢুকে মাছ শিকারের পাশাপাশি হরিণও শিকার করে থাকে।’ জানা গেছে, এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক মাসে কয়েকটি অভিযানে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় ৫০০ কেজি মাছ, ৫০ কেজি হরিণের মাংস ও শতাধিক বোতল বিষ উদ্ধার করেছে পুলিশ ও কোস্ট গার্ড। ৫ অক্টোবর সুন্দরবনের ভ্রমরখালী অভয়ারণ্য থেকে মাছ শিকার করে ফিরছিলেন আজিজুল হক নামে এক জেলে। এ সময় তাঁর মাছ কেড়ে নেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে আজিজুল বাদী হয়ে ৮ অক্টোবর মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা তানজিলুর রহমান ও ভ্রমরখালী টহল ফাঁড়ির ওসি আব্দুল হাকিমসহ চার বন কর্মকর্তাকে। আজিজুল মামলায় অভিযোগ করেন ওই কর্মকর্তারা তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা না দেওয়ায় নৌকাসহ মাছ কেড়ে নেওয়া হয়।

কয়েক দিনে এ প্রতিনিধির কথা হয় সাধারণ জেলে, বাওয়ালী, মৌয়াল ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে। তারা বলেন, বনের টহল ফাঁড়িতে কর্মরত রক্ষীদের সঙ্গে চুক্তি করে মাছ শিকার করতে হয়। চুক্তি অনুযায়ী টাকা কম দিলে বা দেরি হলে হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক সময় অবৈধ ভাবে মাছ শিকারে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করে বাড়ি থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও টাকা আদায় করা হয়।

খালে বিষ দিয়ে শিকারে যারা : প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিরা জেলে নৌকা অভয়ারণ্যের খালে পাঠিয়ে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করিয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে দাকোপ উপজেলার নলিয়ান ইউপি সদস্য জহির উদ্দিন ওরফে জহির মেম্বর, কয়রা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, ৫ নম্বর কয়রা গ্রামের হাবিবুল্যাহ ও ২ নম্বর কয়রা গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের নাম জানা গেছে। এর বাইরেও আরও ২০-২৫ জন দাদন ব্যবসায়ী বন বিভাগের কাছ থেকে অলিখিত ভাবে ইজারা নিয়ে সারা বছর এ ভাবে মাছ নিধন করছেন।

তবে বিষ দিয়ে মাছ শিকার সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন মাছ ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনে এখন আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। এ জন্য জেলের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছি।’ এ ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাও করছেন বলে দাবি করেন তিনি। কয়রার পল­ীমঙ্গল গ্রামের বাসিন্দা ও শ্রমিক লীগের নেতা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে বৈধভাবে সুন্দরবনে জেলে নৌকা পাঠাই। তারা কোথায় মাছ ধরেন, তা জানি না।’
নীলকমল টহল ফাঁড়ি ও কাশিয়াবাদ স্টেশনের সাবেক দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ শিকারে খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জেড এম হাছানুর রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা রয়েছে। প্রতি গোণে তাঁকে টাকা দিয়ে মাছ ব্যবসায়ীরা খালে মাছ শিকারের অলিখিত অনুমতি নেন। তাঁর আওতাধীন সব স্টেশন থেকে মাসিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়া বাধ্যতামূলক। যে কারণে চাইলেও বন অপরাধ দমন সম্ভব হয় না। ওই কর্মকর্তা প্রায় তিন বছর ধরে একই কর্মস্থলে থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন এ জেড এম হাছানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার কারণে অনৈতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত বনকর্মীরা বানোয়াট অভিযোগ করছেন। কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবেন না তারা।’

Leave a Reply