ভোজ্য সয়াবিন, চাল, ডাল, ডিম মাংসসহ সবজির বাজার অগ্নিমুখি

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ৬, ২০২৪, ১২:৫৯

ডেস্ক নিউজ : খুলনায় চাল, ভোজ্য তেল সয়াবিন, ডাল, ডিম, মাংস সহ সবজির বাজার অগ্নিমুখি হয়ে উঠেছে। চাল, ডাল, ভোজ্য সয়াবিন তেল ও আলুর বাজারে কমছে না অস্থিরতা। দীর্ধদিন ধরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে অন্তত দেড়শ’ টাকা। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে সবজির মূল্য কেজিপ্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে ১০/১২ টাকা। চালের দাম কেজিপ্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে কমপক্ষে তিন থেকে চার টাকা। ষাট টাকার নিচে মিলছে না কোনো ধরনের সবজি। পেঁয়াজ ও আলুতে শুল্ক কমালেও এর প্রভাব পড়েনি খুলনার বাজারে। অসাধু ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কৌশলে পকেট কাটছে ভোক্তাদের। নিত্য প্রয়োজনীয় এসব জিনিস ও পণ্যসামগ্রীর দাম আকাশ ছোঁয়া হওয়ায় বিপাকে সমাজের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ।
গতকাল শনিবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা, বেগুন ১৪০ টাকা, কাকরোল ১২০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, কাকরল ১২০ টাকা, কচুরমুখি ৭০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বেড়েছে কাঁচাকলার দাম। প্রতিহালি কাঁচাকলা বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা দরে। অথচ গত ২০ সেপ্টেম্বর মহানগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, কাকরল ৬০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, উচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, কাকরল ১২০ টাকা, কচুরমুখি ৭০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বাজারে প্রতিকেজি লালশাক ৬০ টাকা ও ঘিকাঞ্চন শাক ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

 

দীর্ঘদিন ধরে উর্ধ্বমুখি চালের বাজার। চালের বাজারে চলছে অস্থিরতা। একমাসের ব্যবধানে চালের মূল্য অন্তত কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩/৪ টাকা। শনিবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৫২ টাকা, আঠাশ বালাম ৬০ টাকা, মিনিকেট ভালোমানের ৭০ থেকে ৭২ টাকা, মিনিকেট নি¤œমানের ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা, বাসমতি ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ মাসখানেক আগে মোটা চাল (স্বর্ণা) ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা, আঠাশ বালাম ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, মিনিকেট ভালোমানের ৬০ থেকে ৬২ টাকা, মিনিকেট নিম্নমানের ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা, বাসমতি ৭০ থেকে ৭২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

 

কমছে না আলু ও পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজ ও আলুতে শুল্ক কমালেও এখনো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্য দু’টি। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে এনবিআরকে নির্দেশ দিলেও বাস্তবে এখনো কার্যকর হয়নি। শনিবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রকিকেজি আলু ৬০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা এবং ভারত থেকে আমদানী করা পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
দীর্ধদিন ধরে চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে রসুন। মানবদেহের জন্য বসুন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অথচ অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। শনিবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রকিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা ও চায়না রসুন ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অপর দিকে, কমছে না মশুর ডালের দাম। মাসের পর মাস চড়া দামে বিক্রি পণ্যটি। প্রতিকেজি মশুর ডাল (সরু) ১৪০ টাকা ও মশুর ডাল (মোটা) ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কোনো ভাবে কমছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোজ্য সয়াবিন তেলের মূল্য। বাজারে বোতলজাত ফ্রেশ, তীর, বসুন্ধরা সয়াবিন (৫ লিটার) বিক্রি হচ্ছে ৮৭৫ টাকা দরে। যা লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা দরে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লুজ সয়াবিন। খুচরা বাজারে প্রতিলিটার ১৮০ টাকা, সুপার তেল ১৭৯ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কমছে না চিনির দাম। শনিবারও খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি ১৪০ টাকা ও লাল চিনি (প্যাকেটজাত) ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এদিকে কমেনি মুরগির দাম। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা ও কক মুরগি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। খুচরা বাজারে প্রতিহালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা দরে। বেড়েছে সব ধরনের শাক সবজির দাম।
দেশে আলু এবং পেঁয়াজের বিদ্যমান বাজারমূল্য ও সরবরাহ বিবেচনায় বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনাক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক তুলে দিয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হলেও এখনো বাজারে এর বিন্দুমাত্র কোনো প্রভাব পড়েনি।
নগরীর ময়লাপোতাস্থ কেসিসি আসা ক্রেতা শহিদুল ইসলাম মোল­া বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও জিনিস চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার আলু, পেঁয়াজের দাম কমাতে নির্দেশনা দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাজারদর মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোঃ লিয়াকত আলী বলেন, চালের বাজার উর্ধ্বমুখি। চালের দাম কেজিতে কমপক্ষে তিন থেকে চার টাকা বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় বড় মহাজনরা চালের দাম বাড়িয়ে দিলে খুচরা বাজারে এসে এর প্রভাব পড়ে। নগরীর কেসিসি সুপার কাঁচামাল ব্যবসায়ী মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচামরিচের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন জায়গায় গাছ মরে গেছে। এজন্য কাঁচামরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছ।

Leave a Reply