ভয়েজ ডেস্ক : শয্যা সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতে, বারান্দায় ও বাগানের গাছতলায় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে একটু চিকিৎসা পাওয়ার আশায় দিনাতিপাত করছেন মানুষগুলো। এমন করুণ চিত্র ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের।
বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর ফেনীতে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন শয্যা সংখ্যার নয় গুণের বেশি রোগী। রোগীরা বলছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না তারা। অপরদিকে চিকিৎসকরা বলেন, স্বল্প জনবলে তারা কুলিয়ে উঠতে না পেরে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা দিতে।
মাত্র ১৮ শয্যার এ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন ১৭৬ জন রোগী। যেখানে চিকিৎসা নিচ্ছে নবজাতক থেকে ৩০ বছরের মধ্যকার রোগীরা। রোগী, সঙ্গে স্বজনরা সব মিলিয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হাসপাতালে। রোগীরা বলছেন, সারাদিনে একবার ডাক্তারের দেখা পেলেও হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে না ওষুধপত্র।
জেলার বন্যাকবলিত এলাকা ফুলগাজী থেকে এক বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে এসেছেন সালমা বেগম। তিনি বলেন, বাধ্য হয়ে বন্যার পানি খেতে হয়েছে। এর পর শরীরে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের সমস্যা। বাচ্চাটার কয়েকদিন থেকেই ডায়রিয়া। উপজেলার ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে না সারায় আসতে হয়েছে জেলার এ হাসপাতালে। এখানে এসে দেখা দিয়েছে অন্য বিপত্তি। হাসপাতালে জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে বাইরে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি ডায়ালাইসিস, আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেবা। ঢাকা থেকে টেকনিশিয়ান আসবে আসবে বলেও আসছে না। অপরদিকে হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে নেই মেডিসিন, চর্ম-যৌন, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি, রেডিওলজিস্ট চিকিৎসক। জনবল সংকট থাকায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল হাসান শাম্মী বলেন, যেটুকু জনবল আছে তা দিয়ে চেষ্টা করছি। আমরা রোগীদের সেবা দিতে বদ্ধপরিকর।
সিনিয়র স্টাফ নার্স সুলতা রানী বসাক বলেন, ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী। অল্প জনবলে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।
জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, বমি, আমাশয়, টাইফয়েডের সঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে সাপেকাটা রোগীর সংখ্যাও। কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছে ৫৭০ জন। জরুরি বিভাগে সেবা নিচ্ছেন আরও হাজার খানেক রোগী।
ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে শুধু ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৬০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি।
Leave a Reply