ভয়েজ ডেস্ক : ভারি বর্ষণে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে মৌসুমি ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের শত শত বিঘা জমির ধান ক্ষেত, মাসকলাই ও শাকসবজি তলিয়ে গেছে। ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের ফলে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। যার কারণে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ ফসল পানিতে ডুবে আছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার চাষি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের কুলফাডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ডুবে আছে মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত। এছাড়াও সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ১৫/২০টি পরিবার পানি বন্ধি জীবন যাপন করছেন। অপরিকল্পিতভাবে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের পাশের খাল ভরাট করার কারণে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে এলাকাবাসী মনে করছে।
অপরদিকে সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে মাঠের পর মাঠ। পাকা ধান, মরিচখেত, বেগুন, সেচ পাম্পসহ হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল পানির নিচে। পাতা কপি, ফুল কপি, মরিচ গাছগুলো মরে নেতিয়ে পড়েছে। কলা গাছ ভেঙে পড়ে আছে। গ্রামবাসি বলছে জীবনা গ্রাম থেকে রাঙ্গীয়ারপোতা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য কাজল খালটি সংস্কার করা হলে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হতো। সদর উপজেলার চুটলিয়া, তেঁতুলতলা, নৈহাটি, মধুহাটি, সাগান্না ও হলিধানী, ডাকবাংলা, রাঙ্গীয়ারপোতা, নাথকুন্ডু, ডহরপুকুর, বাথপুকুর, বেজিমারা, মামুনশিয়া, চোরকোল, বেড়াশুলা, সাধুহাটীর সাইভাঙ্গার বিল ও পোতাহাটীর কুড়ির মাঠ পানিতে ডুবে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতার।
বংকিরা গ্রামের কৃষক ইছানুল হক বিশ্বাস জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবনা গ্রামের কিছু লোক বাঁধ দেওয়ার কারণে তার গ্রামের এক হাজার বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। তিনি বংকিরা গ্রামে বিএডিসি কর্তৃক খননকৃত কাজল খালটি সংস্কারের দাবী জানিয়ে বলেন, খালটি খনন না করা হলে শীত মৌসুমেও ধান চাষাবাদ করতে পারবেন না।
অপরদিকে ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, পরপর দুইবার টানা চার ও তিন দিনের বর্ষনে জেলায় ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর ফসলী জমি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতি হওয়া ফসলের মধ্যে রোপা আমন ৯১৩ হেক্টর, সবজি ৬৬৫ হ্ক্টের, মাসকলাই ১১০৬ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ৯৮ হেক্টর, মরিচ ২০০ হেক্টর, কলা ১৭০ হেক্টর, রোপা আউশ ১০ হেক্টর, তুলা ২১ হেক্টর, পান ২ হেক্টর ও মুগ ডাল ৮০ হেক্টর রয়েছে। আক্রান্ত ফসলের মধ্যে ১১৭৫ হেক্টর জমির ফসল সম্পুর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। বেশি ক্ষতি আশঙ্কা হয়েছে মহেশপুর, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলায়।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একবার ভারি বর্ষনে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছিল, আবার নতুন করে বর্ষন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আগে তো জেলায় ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর ফসলী জমি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছিল ১১৭৫ হেক্টর জমির ফসল। নতুন করে তালিকা করে কৃষি বিভাগ আক্রান্ত ও ক্ষতির পরিমান নিরুপন করবে।
জলাবদ্ধতা নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের ঝিনাইদহ জোনের সহকারী প্রকৌশলী সৌরভ কুমার বিশ^াস জানান, সম্প্রতি আমি সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শনকালে দেখা গেছে বহু ক্ষেতের ফসল বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। তিনি বলেন জলাবদ্ধতা নিরসনে কি ব্যবস্থা গ্রহন করা যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঝিনাইদহে জলাবদ্ধতা মাঠের পর মাঠ জরুরী খাল সংস্কারের দাবি
প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ১৬:২২
Leave a Reply