আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া যখন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা করছে, তখন এই পদক্ষেপ একাধিক বাধার সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে চীনের ব্যাংকগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রুশ লেনদেনকে বাধা দিচ্ছে, যার ফলে রুবল থেকে ইউয়ান লেনদেনে ফি বাড়াতে বাধ্য হয়েছে মস্কো। ইউক্রেনে আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা রাশিয়া চীনের অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, কিন্তু এই নির্ভরশীলতাই এখন তাদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে উঠছে। মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক এ খবর জানিয়েছে।
২০২২ সালে রাশিয়া ও চীনের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা রাশিয়াকে চীনের অন্যতম প্রধান তেল সরবরাহকারী করে তুলেছে। তবে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীনা ব্যাংকগুলো রুশ লেনদেনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ৯৮ শতাংশ চীনা ব্যাংক রাশিয়ার ইউয়ানভিত্তিক লেনদেন প্রত্যাখ্যান করছে। চীনের স্থানীয় ব্যাংকগুলোও বাইডেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা রাশিয়ার অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে।
রাশিয়ার জন্য ইউয়ানভিত্তিক লেনদেন কমে যাওয়ায় তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে, যার কারণে রুশ ব্যাংকগুলো ইউয়ান স্থানান্তরের ফি বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। গত সপ্তাহে, রাশিয়ার বাণিজ্যিক ব্যাংক এক্সপোব্যাংক তাদের ইউয়ান লেনদেনের ফি ১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে, যা স্থানান্তরের সর্বনিম্ন কমিশন ছিল সাড়ে সাত হাজার ইউয়ান। উরালসিব ব্যাংকও ইউয়ান স্থানান্তরে একই ফি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া এসডিএম ব্যাংক তাদের স্থানান্তরের ফি ৬ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করেছে।
এসডিএম ব্যাংকের উপ-চেয়ারম্যান ভিয়াচেস্লাভ আন্দ্রুশকিন বলেন, এই মুদ্রায় অর্থ প্রদান করা কঠিন হওয়ায় খরচ বাড়ছে। বাজারে সুযোগের অভাবের কারণে ফি বৃদ্ধির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের জন্য এটি স্থানান্তরের জন্য ব্যাংকের খরচ বৃদ্ধির কারণে ঘটছে।
চীনের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার ফলে রাশিয়ার আমদানিকারকদের মধ্যস্থতাকারীর ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে চীন ও রাশিয়ার একটি যৌথ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা।
মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির এশিয়া ও আফ্রিকা বিষয়ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যালেক্সেই মাসলোভ বলেন, রুশ-চীনা ব্যাংকের ধারণা কয়েক দশক আগে আলোচিত হয়েছিল, কিন্তু তখন এটি প্রাসঙ্গিক ছিল না, কারণ বিদ্যমান ব্যবস্থা কার্যকর ছিল।
রাশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়িয়েছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি) মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় ডলার লেনদেন সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, যা রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ইউয়ান ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল করে তোলে।
রাশিয়া এখন নিজের অর্থনীতির জন্য চীনের মুদ্রানীতি এবং বিনিময় হারের পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করছে, যা মস্কোর জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠছে।
Leave a Reply