আজ পবিত্র ১২রবিউল আউয়াল

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪, ০০:০২

মাও: মুহা: ফজলুর রহমান :
আজ পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল। ইসলামের ইতিহাসে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত।বিশেষত দুটি কারণে ১২ রবিউল আউয়াল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। প্রথমত, সব ইতিহাসবিদের ঐকমত্য বর্ণনা মতে, এই দিনেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, প্রসিদ্ধ অভিমত অনুযায়ী এই ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন। খ্রিস্টীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.) ভূমিষ্ঠ হন। তাঁর জন্ম তারিখ ২০ এপ্রিল। আরবি হিজরি সন অনুযায়ী তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলেন, রবিউল আউয়ালের ৮ তারিখ মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন। বেশির ভাগ হাদিসবিশারদ একে বিশুদ্ধ বলেছেন। মহানবী (সা.)-এর জীবনীকারদের মধ্যে ইবনে ইসহাক প্রথম সারির জীবনীকার। তিনি বলেন, মহানবী (সা.) হাতিবাহিনীর ঘটনার বছর ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, খণ্ড-১, পৃ. ১৫৮) তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআন প্রণেতা মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) মহানবী (সা.)-এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে আরো কিছু অভিমত উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন : এ বিষয়ে সবাই একমত যে নবী করিম (সা.)-এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার দিন হয়েছিল। কিন্তু তারিখ নির্ধারণে চারটি বর্ণনা প্রসিদ্ধ আছে—২, ৮, ১০ ও ১২ রবিউল আউয়াল। এর মধ্যে হাফিজ মুগলতাই (রহ.) ২ তারিখের বর্ণনাকে গ্রহণ করে অন্য বর্ণনাগুলোকে দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে ১২ তারিখের বর্ণনা। ‘তারিখে ইবনে আছির’ গ্রন্থে ১২ তারিখই গ্রহণ করা হয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম তারিখ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দিন হিসেবে সোমবার সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই। কারণ জীবনচরিতকাররা একমত যে রবিউল আউয়াল মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে সোমবার দিন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম। এই সোমবার ৮ অথবা ৯ কিংবা ১২—এটুকুতেই হিসাবের পার্থক্য রয়েছে মাত্র। (ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ) ১২রবিউল আউয়াল মিলাদুন্নবী রাসূল পাক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জন্মদিন। অর্থাৎ খুশির দিন। তবে এদিন তো তাঁর ওফাত দিবসও যা শোকের বা দুঃখের। মুসলমান হিসেবে রবিউল আউয়ালে সবাই আন্দোলিত হই। প্রিয়নবীর প্রতি আমাদের ব্যাকুল অন্তরের আকুল অনুভূতির প্রকাশ ঘটে। মহব্বতে রাসূলের নতুন হাওয়া বইতে থাকে চারদিকে। তবে আমাদের মহব্বতের প্রকাশভঙ্গিটা যথার্থ কি-না তা বিবেচনার দাবি রাখে। অনুষ্ঠানের হিড়িক, চোখ ধাঁধানো চাকচিক্য এবং মহব্বতে রাসূলের সস্তা প্রয়োগের কারণে মাহে রবিউল আউয়াল আমাদের জীবনধারায় কোনোই পরিবর্তন আনতে পারে না। গতানুগতিক বহমান স্রোতে পণ্ড হয়ে যায় রবিউল আউয়ালের প্রকৃত চেতনা ও দাবি। রবিউল আউয়ালের পয়গাম ও দাবি কী, সেগুলোও আমাদের কাছে আজ স্পষ্ট নয়। আনুষ্ঠানিকতার সব আয়োজনই আমরা সম্পন্ন করি, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও শিক্ষা, বাস্তবজীবনে নবীজির আদর্শের কোনো ছাপ রাখতে পারি না। তাছাড়া হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার জীবদ্দশায় তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন এমন কোন ঐতিহাসিক দলিল নেই বলে শুনেছি এমনকি তাঁর সাহাবারাও তাঁর জন্মদিন পালন করেছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।‌এ জন্য সিরাতুন্নবীর যথার্থ দাবি আদায়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া ইমানদীপ্ত চেতনার সর্বপ্রধান দায়িত্ব। একজন মুসলমানের ঈমানের দাবী হলো প্রিয় নবী (সাঃ) এর স্মরণে তার গোটা জীবনকে ভরিয়ে রাখা। নবীজির স্মরণকে বিশেষ কোনো পদ্ধতির মধ্যে সীমিত করা সঙ্কীর্ণ মানসিকতার পরিচায়ক। তবে বিশ্বমানবতার আশীর্বাদ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মও মৃত্যু দিবসকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে আমরা সিরাতুন্নবী হিসেবে এই দিনকে অথবা বছরের যে কোন একটি দিনকে পালন করতে পারি। কারণ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনে একটি দিবসে গন্ডিতে না থেকে তার ৬২ বছরের জীবনের আলোচনা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া তাঁর জন্মদিনের আদর্শ বাস্তবায়ন না করে তার সমগ্র জীবনের আদর্শ বাস্তবায়ন করা বা করার চেষ্টা করা বা করতে উদ্বুদ্ধ করা হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মত হিসেবে আমাদের নৈতিক দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য। বিশেষ করে এই পবিত্র দিনে আমরা মহানবী (সাঃ)-এর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সালাম জানাই। হানাহানি ও অশান্তিতে ভরা এই বিশ্বে শান্তি স্থাপনে তার রেখে যাওয়া আদর্শ মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখাতে পারে। মানবজাতির জন্য যার প্রয়োজন আজ সবচেয়ে বেশি।
মিলাদুন্নবী বা সিরাতুন্নবী (সাঃ) যে নামেই হোক না কেন, আমাদের লক্ষ্য থাকতে হবে দুটি। একটি হচ্ছে রাসূল (সাঃ) এর ভালোবাসায় আমাদের ঈমান তেজোদ্দীপ্ত করা এবং অন্তর আলোকিত করা। অপরটি রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণের জ্ঞান আহরণ এবং তা বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করা। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি (রাসূল) তার কাছে তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি ও দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে প্রিয়তর না হই।’ আর এজন্যই
প্রতিটি মুসলমান নবীজি (সাঃ) কে জীবনের চেয়েও অধিক মুহব্বাত করেন, ভালোবাসেন। মুসলমান নিজের মান-সম্মান, ইজ্জত-আব্রু, জানমাল সব কিছুই বিসর্জন দিতে পারে কিন্তু রাসূল (সাঃ) এর কোনো প্রকার ক্ষুদ্রতম অবমাননাও সহ্য করতে সক্ষম হয় না। ঠিক নবীজি সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরও মানুষসহ সকল সৃষ্টিজীবের প্রতি ছিল অকৃত্রিম মহব্বত ও ভালোবাসা। মানুষকে তার ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণের জন্য নবীজি (সাঃ) কে ভালোবাসার প্রতি কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে পবিত্র ইসলাম ধর্মে। কারণ রাসূল (সাঃ)-এর মুহব্বাত ঈমানের অঙ্গ। দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার চাবিকাঠি। তার ভালোবাসা মুমিনের পরিচয়। যার অন্তরে তার মুহব্বাত ও ভালোবাসা থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যার অন্তরে তার মুহব্বাত নাই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে নবী, আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে তোমরা আমার (নবীর) অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন। (সুরা, আল ইমরান, আয়াত নং-৩১)। হযরত রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে মুহব্বাত করল সে আমার সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযি শরীফ, হাদীস নং-২৬৭৮)। আল্লাহ আমাদের সকলের অন্তরে রাসূল (সাঃ) এর মুহব্বাত সৃষ্টি করে দেন,আমিন।

সহকারী প্রধান শিক্ষক, পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা,খতীব বায়তুল আমান জামে মসজিদ চকমাথুরাবাদ,পিপড়ামারী,হরিণটানা,খুলনা।

Leave a Reply