ভয়েজ ডেস্ক : বন্যার পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। নীচু এলাকায় এখনো রয়েছে পানি। ঘর বসবাসের উপযোগী না হওয়ায় বানভাসীরা এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। রাস্তাঘাটে পানি থাকায় স্কুলে যেতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা।
বন্যার পানি সরে না যাওয়ায় নোয়াখালীতে এই জলাবদ্ধতা যেন স্থায়ী রুপ নিচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই জলাবদ্ধতার কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী রয়েছে খাদ্য ও কর্ম সংকটে। এদিকে বন্যার রেশ না কাটতেই জেলাতে আবার দেখা দিয়েছে বৃষ্টি। সাথে সাথে বয়ে যাচ্ছে বাতাস। বন্যার কবলে পড়া মানুষের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ।
জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে লগুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এত সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত মেনে চলতে বলা হয়েছে। তাছাড়া উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ভারী বৃষ্টির সাথে ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন।
সুবর্নচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের কৃষক সিরাজ মিয়া জানান, বন্যার পানিতে আমন ধানের চারা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পানি একটু কমাতে আবার চারা রোপণ করেছিলাম। হঠাৎ আবার পানি বেড়ে গিয়ে সেটাও তলিয়ে যায়। তৃতীয় বারের মতো আবার চারা রোপণের জন্য জমিতে চাষ দিয়েছি। এখন আবার আবহাওয়ায় দেখা দিয়েছে পরিবর্তন নতুন করে বৃষ্টির সাথে হচ্ছে বাতাস। ধান চাষ না করলে আমাদের বড় ধরণের লোকসান হয়ে যাবে।
চরবাটা ইউনিয়নের কৃষক জহির বলেন, ৯ একর জায়গার উপর মাছের ঘের করেছিলাম। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রতিটি ঘেরের মাছ ভেসে যায়। বিশাল লোকসান হয়েছে। অল্প কিছু রয়েছে, তবে তা ক্ষতি পুুষিয়ে নেওয়ার মতো নয়। নতুন করে কিছু মাছের পোনা ছেড়েছিলাম। যদি আবার বন্যা হয় পথে বসে যাবো।
একই ইউনিয়নের কল্পনা রানী দাস নামে একজন বলেন, বাড়ির পাশে পুকুরের চারিপাশে সবজির চাষ করেছিলাম। পুকুরের মাছও ভেসে গেছে, সাথে সবজিরও ক্ষতি হয়েছে। আমার স্বামী নতুন করে আবার মাছের পোনা ছেড়েছেন, সাথে নতুন করে সবজির চারা রোপণ করেছি। আবার যদি বন্যার কবলে পড়ি, তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।
চরবাটা ইউনিয়নের চরহাজী গ্রামের সুবেল নামে এ কৃষক জানান, বন্যায় পানের বাগান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে চারা রোপণ করেছি। আবার যদি বন্যা হয় তাহলে সব তছনছ হয়ে যাবে। পথে বসে যাবো। লোন শোধ করতে না পারলে সুদের হার বেড়ে যাবে।
নুরুল আলম নামে একজন বলেন, নতুন করে যদি ভারী বৃষ্টি অথবা বন্যা হয় তাহলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আবার বিপদে পড়ে যাবে। কিছুদিন যে বন্যার কবলে পড়েছিলো সেখান থেকে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এখানো অনেক বানভাসী আশ্রয়কেন্দ্রে আছে। খাদ্যের সংকট রয়েছে। চারদিকে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, জেলায় ৩৪৯ টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ৩৫ হাজার ৪৪১ জন বানভাসি এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো রয়েছে। ১১ লক্ষ ৫৫ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে। নতুন করে প্লাবন দেখা দিলে তা মোকাবেলা করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রশাসন সব সময় সতর্ক রয়েছে।
Leave a Reply