হাসিনার স্বৈরশাসন অক্ষুণ্ণ রাখতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ড

প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪, ১৭:২৪

ডেস্ক নিউজ : পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে পুনরায় তদন্ত ও বিচারের দাবিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীসহ মোট ৫৭ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে অভিযোগ জমা দেন শহিদ সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনেরা। এরপর তাদের মধ্যে কয়েকজন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।

অভিযোগ দাখিলের পর তারা সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিরোধী রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তথা: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ধ্বংসের নীলনকশা প্রণয়ন করে।

সেই লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য সর্বপ্রথম শিকারে পরিণত হয় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসে কর্মরত পেশাদার, সৎ, দক্ষ, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর অফিসারদের একটি অংশ। শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর উক্ত দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের নিজের স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত করার ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধানতম অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে। উক্ত সেনা অফিসারদের ওপর গণহত্যা সংঘটন করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

সাবেক অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অন্যান্য আসামিগণ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এই হত্যাযজ্ঞ চালায়। এই ঘটনায় ৭৪ জন প্রাণ হারান। শেখ হাসিনা এই গণহত্যাকে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীসহ সকল দেশপ্রেমিক জনগণকে কড়া বার্তা দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে।

তারা অভিযোগ করে বলেন, রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত পিলখানা সদর দফতরে তৎকালীন বিডিআরে কর্মরত দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র সেনাবাহিনী অফিসার এবং তাদের পরিবার বর্গকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের ওপর পদ্ধতিগত উপায়ে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায় এবং তাদের পরিবার-পরিজনকে আটকাবস্থায় জিম্মি করে। কিছু সেনাবাহিনী অফিসারের লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়, লুটপাট চালিয়ে এবং শারীরিক-মানসিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে।

তারা আরও বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক আপামর বীর ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা আরও একবার নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করেছি। ফিরে পেয়েছি বাক স্বাধীনতা। আজকে নতুন করে পেয়েছি বাঁচার আশা। সরকারের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন পিলখানা গণহত্যার তদন্ত ও বিচার সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। এবং বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে দায়েরকৃত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যেসকল নিরীহ, নিরপরাধ ও নির্দোষ বিডিআর জওয়ানদেরকে বছরের পর বছর কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তাদেরকে মুক্তি প্রদানে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করে মানবিক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করবেন। আমরা একই সাথে ’২৪-এর জুলাই আন্দোলনসহ বিগত ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং তার দোসর কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হওয়া সকল শহিদ, আহত-পঙ্গু ও গুমকৃত ব্যক্তিদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, তাদেরকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি ও অনুরোধ জানাই।

Leave a Reply