স্পট মার্কেট থেকে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির উদ্যোগ

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪, ০৬:৩৩

ভয়েজ ডেস্ক : দেশে গ্যাসের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য পেট্রোবাংলার সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী ২৩টি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে ৪ মাসের জন্য ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর আওতায় স্পট মার্কেট হতে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির বিষয়ে নীতিগত অনুমোদনের একটি প্রস্তাব পরবর্তী অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

আগামী বুধবার অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং কমিটির সভাপতি ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এটাই কমিটির প্রথম সভা।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ,সার, শিল্পখাতসহ বিভিন্ন খাতে দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩৮০০ এমএমসিএফ (কম/বেশি)। দেশে গ্যাস সরবরাহের সর্বোচ্চ সক্ষমতা দৈনিক ৩১৫০ এমএমসিএফ (কম/বেশি) যা চাহিদার ৮২%। মোট সরবরাহকৃত গ্যাসের মাধ্য দেশীয় উৎপাদন দৈনিক ২০৫০ এমএমসিএফ (কম/বেশি) এবং অবশিষ্ট দৈনিক প্রায় ১১০০ এমএমসিএফ (কম/বেশি) গ্যাস এলএনজি আকারে আমদানি করা হয়। কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক্সেলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক দৈনিক ৬০০ এমএমসিএফ এবং সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃক দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। জি টু জি ভিত্তিতে পেট্রোবাংলার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় কাতারের রাস লাফ্ফান লিকুইডিফাইড নেচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (কাতারগাস) থেকে ১৫ বছর মেয়াদে বর্তমানে ২.৫ এমটিপিএ এলএনজি এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল (ওকিউটি) থেকে ১০ বছর মেয়াদে বর্তমানে ১.০ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়া গ্যাসের চাহিদার ভিত্তিতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হয়।

সূত্র জানায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ এর আওতায় প্রক্রিয়াকরণের জন্য সরকার গত ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর তারিখে নীতিগত অনুমোদন দেয়। এই আইনের আওতায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের লক্ষ্যে সরবরাহকারীর তালিকা প্রস্তুতের জন্য এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করে গত ২০১৭ সালের ৮ জুন তারিখে জাতীয় পত্রিকায়, সিপিটিইউ, পেট্রোবাংলা ও আরপিজিসিএল-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

সূত্র জানায়,আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শকের সহায়তায় আন্তর্জাতিক মানের এমএসপিএ প্রস্তুত করা হয়। আন্তর্জাতিক মানের টেন্ডার নোটিশ, টেন্ডার ডকুমেন্ট ও কন্ট্রাক্ট ডকুমেন্টে যে সব শর্তাবলী ও বিষয়সমূহ সাধারণত উল্লেখ থাকে তা এমএসপিএ-তে সন্নিবেশিত রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে দাখিলকৃত আবেদনের মধ্যে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান এসএসপিএ অনুস্বাক্ষর করে।পরবর্তীতে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে পেট্রোবাংলার সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান এমএসপিএ স্বাক্ষর করে।

সূত্র জানায়,অধিকতর প্রতিযোগিতার জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৩টিতে উন্নীত করা হয়। উল্লেখ্য, বর্ণিত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এলএনজি সরবরাহে বিশ্বে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অদ্যাবধি স্পট মার্কেট থেকে ৭৪ কার্গো এলএনজি আমদানির জন্য সর্বমোট ৯৭ বার (রি-টেন্ডারসহ) দর প্রস্তাব আহ্বান করা হলে এর বিপরীতে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১২টি প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাবে অংশ নেয়।

সূত্র জানায়, গ্যাসের চাহিদা নিরূপণ করে স্পট মার্কেট থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে এলএনজি আমদানির জন্য মন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন নেওয়া হয়। চাহিদা অনুযায়ী ডেলিভরির উইন্ডো নির্ধারণ করে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সর্বনিম্ন ৩য় দিন সময় দিয়ে দর প্রস্তাব দাখিলের জন্য ই-মেইল পাঠানো হয়। দর প্রস্তাব গ্রহণের লক্ষ্যে প্রস্তুতকৃত এলএনজি স্পট পারচেজ (এলএসপি) সফটওয়্যারের মাধ্যমে দর প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ২৩টি প্রতিষ্ঠান এলএসপি সফটওয়্যারে নিবন্ধিত থাকে এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠান একটি ইউনিক আইডির মাধ্যমে তাদের প্রস্তাব দাখিল করে। দর প্রস্তাব গ্রহণ ও মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পিপিসির সুপারিশ এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে রেসপন্সিভ সর্বনিম্ন দর প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমএসপিএ এর আলোকে কনফারমেশন নোটিশ (চুক্তি) স্বাক্ষর করা হয়। দর প্রস্তাব আহ্বান থেকে চুক্তি স্বাক্ষর পর্যন্ত কার্যক্রমে ৮ হতে ১২ দিন সময় প্রয়োজন হয়।

গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য উৎপাদিত দেশীয় গ্যাসসহ আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত (সেপ্টেম্বর মাসে ৬ কার্গো, অক্টোবর মাসে ৫ কার্গো, নভেম্বর মাসে ৫ কার্গো এবং ডিসেম্বর মাসে ৪ কার্গো) মোট ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে পেট্রোবাংলার।

সূত্র জানায়, জরুরি প্রয়োজন মেটাতেই চার মাসের চাহিদা পূরণে স্পট মার্কেট থেকে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করা কিছুটা সময় সাপেক্ষ। এ কারণে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতার আমদানির বিকল্প হিসেবে স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি আমদানি করা হয়।

Leave a Reply