সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ২০১৬ সালের বনবিভাগের জরিপে বলা হয়েছে সুন্দরবনের কুমিরের সংখ্যা ১০০ কিন্তু এই তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন বনোজিবিরা তাদের অভিমত সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ২০০ অধিক কুমির রয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের বোনজীবী মাছুম,মতলেব,আজিজ, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কাশেম, রেজাউল, বাক্কার,জাবেদ,দাতিনা খালি গ্রামের মান্দার আজগার কালিনছে গ্রামের রহমত, জাহাঙ্গীর, নজরুল, আতিয়ার,জানান সুন্দরবনের নদী খালে যে হারে কুমিরের আনা গোনা দেখা যায় তাতে ২০০ অধিক কুমির রয়েছে।ফরেস্ট সুন্দরবনে জলভাগের ‘প্রহরী’ খ্যাত সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী কুমিরের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে এক হাজার ৮৭৩ বর্গকিলোমিটার জলভাগে বর্তমানে মাত্র ১শ’ বা তার অল্প কিছু বেশি কুমির রয়েছে। এখানে প্রাকৃতিক কুমিরের বংশ বিস্তার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এখনই সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে সুন্দরবন থেকে কুমির বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। কুমিরের সংখ্যা জানতে সম্প্রতি সুন্দরবনে চালানো জরিপের প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শেষে এমন ধারণা সংশ্লিষ্টদের। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গত ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে বন বিভাগ ও বেসরকারী বন্যপ্রাণী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল রিসোর্সেস এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সুন্দরবনে কুমির গণনা শুরু করে। খুলনা অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ততকালীন জাহিদুল কবির জানান, কুমির জরিপের জন্য চারটি ভাগে ভাগ হয়ে গোটা সুন্দরবনে প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শেষ করেছেন তারা। সংগ্রহীত তথ্য-উপাত্ত বর্তমানে বিশ্লেষণের কাজ চলছে। বিশ্লেষণ শেষ হলে সুন্দরবনে কুমিরের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। কুমির গণনায় আধুনিক প্রযুক্তি জিপিএস সিস্টেমের ব্যবহার করা হয়েছে। চারটি দলে ভাগ হয়ে জরিপ দলের সদস্যরা ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জে গণনার প্রাথমিক কাজ শেষ করে। প্রতিটি দলে ১০ জন করে সদস্য ছিলেন। এ সময় তারা বনের অধিকাংশ নদী-খাল ঘুরে কুমিরের অবস্থান, চলাচল, ঘনত্বসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ডিভাইস থেকে সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ শেষে জরিপকালে গোটা সুন্দরবনে কত কিলোমিটার নদী-খাল ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তাও জানা যাবে বলে জানান তত্কালীন জাহিদুল কবির। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। বাকি অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বাংলাদেশ অঞ্চলে সুন্দরবনে জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৩ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ছোট-বড় প্রায় ৪৫০ নদী ও খাল রয়েছে। কুমির বিশেষজ্ঞ সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের সাবেক কর্মকর্তা আবদুর রব জানান, সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ অনুযায়ী অন্তত ছয় থেকে সাত হাজার কুমির বিচরণ করার কথা। কিন্তু সর্বশেষ ১৯৮৫ সালের আইআরএম রিপোর্ট অনুযায়ী ১৫০ থেকে ২০০ কুমির রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তার ধারণা, বাস্তবে গোটা সুন্দরবনে এখন একশ’র মতো কুমির থাকতে পারে। তিনি জানান, সুন্দরবনে ‘মার্শ’ ও ‘এস্টুয়ারাইন’ প্রজাতির কুমির ছিল। ১৯৬৩ সাল থেকে ‘মার্শ’ প্রজাতির কুমির বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এখন সুন্দরবনে কেবল ‘এস্টুয়ারাইন’ (লোনা পানির কুমির) কুমিরের বিচরণ রয়েছে, তাও এখন বিলুপ্তর পথে। ‘এস্টুয়ারাইন’ প্রজাতির কুমিরকে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার এ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেসের রেড বুকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ক্যারিনামের নির্বাহী প্রধান ড. এস এম এ রশীদ বলেন, আমরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে কুমির নিয়ে কাজ করছি। সুন্দরবনের আয়তন ও জলভাগের হিসাব অনুয়ায়ী হাজার হাজার কুমির থাকার কথা। কিন্তু জরিপের তথ্য বন বিভাগ ও আমাদের হতাশ করেছে। এবার আমরা এক সঙ্গে চারটি রেঞ্জে কাজ করেছি। এ সময় দুটি বিষয় মোটামুটি পরিষ্কার হয়েছে। প্রথমত, সুন্দরবনের সব এলাকায় এখন আর কুমির নেই। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে বনে প্রাকৃতিকভাবে কুমিরের বংশ বিস্তার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। তাই সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে সুন্দরবন থেকে কুমির বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। জরিপের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী কুমিরের সংখ্যা ১০০ বা তার কিছু বেশি বলে শোনা গেলেও চূড়ান্ত ফল তৈরির আগে এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ততকালীন সাইদুল ইসলাম জানান, লবণ পানির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য ‘সুন্দরবনস বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন’ প্রকল্পের আওতায় ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে আট একর জমিতে দেশের একমাত্র সরকারী কুমির প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ওই বছর সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে জেলেদের জালে আটকা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি লোনা পানির কুমির নিয়ে যাত্রা শুরু হয় করমজল বনপ্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের। করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে বর্তমানে ২৫৮ কুমির রয়েছে। কুমির গণনার সমন্বয়ক ডিএফও জাহিদুল কবির বলেন, জরিপের প্রাথমিক তথ্য গোটা সুন্দরবনে বর্তমানের একশ’ বা তার কিছু বেশি কুমির রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জরিপকালে প্রাপ্ত সব তথ্য বিশ্লেষণের আগে চূড়ান্ত সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। চলতি বছরের এপ্রিল নাগাদ জরিপের চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বন বিভাগ সূত্র বলছে, জরিপের ফলে কুমিরের প্রজনন ও বংশ বিস্তারে কি কি হুমকি রয়েছে তা শনাক্ত করতে হবে। এছাড়া এই হুমকি মোকাবেলায় কি করা যেতে পারে সে বিষয়েও বিভিন্ন সুপারিশ করা হবে। তবে ২০১৬ সালের জরিপের হার প্রত্যাখ্যান করে বোনজীবী দের দাবি সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ২০০ অধিক কুমির থাকতে পারে বিশেষ করে পশ্চিম সুন্দরবনের ইলসামারি আগুন জ্বালো বেলা কয়লা ও তাল পার্টিতে বাঁকে বাঁকে কুমিরের দেখা মেলে।
সুন্দরবনের কুমিরের সংখ্যা ১০০, বনজীবীদের দাবী ২০০ অধিক
প্রকাশিতঃ নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ১২:৩০
Leave a Reply