মাও: মুহা: ফজলুর রহমান :
সন্তান আল্লাহ তা’আলার বিশেষ নিয়ামত। আল্লাহ তাআলা যাকে চান তাকে এ নিয়ামত দান করেন। কেউ চাইলেই সন্তান লাভ করতে পারে না। আবার সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে তা সম্পূর্ণ আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছাধীন। “তিনি যাকে ইচ্ছা মেয়ে দেন, যাকে ইচ্ছা ছেলে দেন।” এজন্য নবজাতক ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক সর্বাবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত। পারলে শুকরিয়া স্বরূপ দু’রাকাত নফল নামায পড়া উচিত। একটি সন্তানই মা-বাবার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। সন্তান জন্মের পর সন্তানকে সঠিকভাবে মানুষ করতে পারা, সুন্দরভাবে লালন-পালন করে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে পারা আরো বেশি সৌভাগ্যের। রাসুলুল্লাহ সা. আমাদের জন্য সেই সৌভাগ্যের পথটিও বাতলিয়ে দিয়েছেন। অসংখ্য হাদিসের মধ্যে সন্তান জন্মের পরবর্তী করণীয় বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। তন্মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো। ১। সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক তার ডান কানে আযান দেয়া এবং বাম কানে একামত দেয়া সুন্নাহ। এটি পিতা-মাতার উপর এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যে, শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের আওয়াজ পৌঁছে দেয়া এবং ওত পেতে থাকা শয়তান যেন তার কোন ক্ষতি করতে না পারে। হযরত আবু রাফে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি মহানবী (সা.)-কে দেখেছি, ফাতিমা (রা.)-এর গর্ভে হযরত হাসান (রা.) জন্মগ্রহণ করলে তিনি তাঁর কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছেন। (তিরমিজি, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩) মহানবী (সা.) বলেন, যখন তোমাদের সন্তানেরা কথা বলতে শেখে তখন তাদের কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু শিক্ষা দাও (বায়হাকি)। ২। বাচ্চার বয়স সাত দিন হওয়ার পর তার একটি অর্থপূর্ণ সুন্দর নাম রাখা। (আবু দাউদ)। অর্থবহ নাম হওয়া নামের সৌন্দর্য। মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে নামের মাধ্যমে। দুনিয়ার এ নামেই পরকালে তাকে ডাকা হবে। এ নামের প্রভাব পড়ে জীবন চলার পথে ও বংশের মধ্যে। রাসূল সা: বলেন : ‘তোমরা যখন আমার কাছে কোনো দূত পাঠাবে তখন সুন্দর চেহারা ও সুন্দর নামবিশিষ্ট ব্যক্তিকে পাঠাবে।’ (তিরমিজি : ২৮৩৯) ফলে মাতা-পিতার কর্তব্য হলো তার সন্তানের একটি অর্থবহ নাম রাখা। মহানবী (সা.) অর্থবহ নয় এমন অনেক নাম পরিবর্তন করেছেন। যেমন আবদুল ওজ্জা নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আবদুল্লাহ, বুররা নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘জয়নব’। ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, তাঁর পিতা একদা মহানবী (সা.)-এর দরবারে আসেন। রাসুল (সা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কী? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘হাজন’ (শক্ত)। মহানবী (সা.) এ নাম পরিবর্তন করে সাহল (সহজ) রাখতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন তা পরিবর্তন করবো না। মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, এর পর থেকে আমাদের পরিবারে সদা কঠিন অবস্থা ও পেরেশানি লেগে থাকত (সহিহ বুখারি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪০৯)। উত্তম হলো আল্লাহর গুণবাচক নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নাম রাখা। যেমন আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান ইত্যাদি। মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। বালিকাদের জন্য উত্তম হলো আমাতুল্লাহ, আমাতুর রহমান ইত্যাদি নাম রাখা। ৩। সন্তান জন্মের সাত দিনের মাথায় আকীকা করা। (আবু দাউদ),সপ্তম দিনে না হলে চৌদ্দ দিনে, না হলে একুশ দিনের মাথায় আকীকা করা যেতে পারে। ৪। সাতদিনের মাথায় শিশুর মাথা মুণ্ডন করে সেই চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য/স্বর্ণ সদকা করা সুন্নত। (তিরমিযী) ৫। ছেলে সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকীকা করা। -(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)। ৬। তাহনিক করা: তাহনিক অর্থ খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় কিছু চিবিয়ে সন্তানের মুখে দেয়া। আয়েশা রা: বলেন : ‘রাসূল সা:-এর কাছে শিশুদেরকে আনা হলে তিনি তাদের জন্য বরকতের দোয়া করতেন এবং তাহনিক করতেন।’ (মুসলিম : ১০৬৯) ৭। শিশুর বয়স সাত বছর হলে তাকে নামায এবং দীনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেয়া। ৮। শিশুর বয়স দশ বছর হয়ে গেলে শাসন করে হলেও তাকে নামাযে অভ্যস্ত করানো। (মেশকাত)। বর্তমান সমাজে অধিকাংশ অভিভাবক/অভিভাবিকাদের শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া এবং আমল-আখলাকে অভ্যস্ত করার ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করতে দেখা যায়। অনেক মা-বাবা মনে করেন, বড় হলে এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি এমনিতেই সেরে যাবে। কিন্তু এমনটি কিছুতেই করা উচিত নয়। শৈশব থেকেই তাদেরকে সুশিক্ষা,নীতি-নৈতিকতা, উত্তম আমল-আখলাকে অভ্যস্ত করতে হবে।
সহকারী প্রধান শিক্ষক, পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা, খতীব বায়তুল আমান জামে মসজিদ চকমাথুরাবাদ,পিপড়ামারী,হরিণটানা,খুলনা
Leave a Reply