মাও: মুহা: ফজলুর রহমান :
খুলনার হরিণটানা থানাধীন, চকমাথুরাবাদ পিপড়ামারী বায়তুল আমান জামে মসজিদের মুসল্লীদের উদ্যেগে সীরাতুন্নবী সঃ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বাদ মাগরিব আলহাজ্ব মোঃ আলম গাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে সিরাতুন্নবী সঃ সম্পর্কে আলোচনা করেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, খুলনার পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসার সহকারী প্রধান শিক্ষক মাওঃ মুহাঃ ফজলুর রহমান। তিনি বলেন- রাসূলের উম্মত হওয়ার কারণে যেমনিভাবে আমরা সর্বযুগের সর্ব নবী-রাসূলগণের উম্মতের থেকে মর্যাদাসম্পন্ন ঠিক তেমনি রাসূল (সা.)-এর আদেশ-নিষেধ অমান্য করলে সর্ব নিকৃষ্ট স্থানে আপতিত হতে হবে। রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর আনুগত্যের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বুঝাতে গিয়ে পবিত্র কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, হে ইমানদারগণ! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের আর সেসব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী। এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যাপারে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে তাকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহ ও পরকালের ওপর ইমান এনে থাকো। এটিই একটি সঠিক কর্মপদ্ধতি এবং পরিণতির দিক দিয়েও এটিই উৎকৃষ্ট (সূরা আন নিসা : ৫৯)। অপর এক আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, তোমরা রাসূলের আহ্বানকে তোমাদের একে-অপরের আহ্বানের মতো গণ্য করো না; তোমাদের মধ্যে যারা একে-অপরকে আড়াল করে অলক্ষ্যে সরে পড়ে আল্লাহতো তাদেরকে জানেন। কাজেই যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের ওপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি (সূরা আন নূর : ৬৩)। এ সকল আয়াত দ্বারা এটি স্পষ্ট যে, রাসূল (সা.)-এর আদেশের বিরুদ্ধাচারণের ফলে আমরা কতটা ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হতে পারি। আজকে পরিবার থেকে আন্তর্জাতিক সকল পর্যায়ে রাসূল (সা.)-এর আদেশের বিরুদ্ধাচারণ বিরাজমান। রাসূল (সা.)-এর আদেশ-নিষেধ, সুন্নত তো মানছিই না উপরোন্ত তাঁকে অবমাননাকর যা কিছু রয়েছে সেগুলো আঁকড়ে আছি। ভুলে গিয়েছি মৃত্যু পরবর্তী জীবনের কথা, ভুলে গিয়েছি আমাদের প্রত্যাবর্তন মহান রবের নিকট। রাব্বুল আলামীন বলেছেন তাঁকে ভালোবাসতে হলে, তাঁকে পেতে হলে রাসূল (সা.)-কে ভালোবাসতে হবে। একটি বারও কি ভেবেছেন কেন উৎকৃষ্ট মর্যাদাসম্পন্ন উম্মতগণ আজ আল্লাহর ক্রুধে ক্রমান্বয়ে নিষ্পেষিত হচ্ছে? প্রাকৃতিক বিপর্যয় ক্রমশ কেনই বা তাদের বিধ্বস্ত করছে? হাহাকার, অস্থিরতা, অতৃপ্তি লেগেই আছে কেন? এ সকল প্রশ্নের উত্তর হলো ‘আল্লাহর অসন্তুষ্টি’। রাসূলের প্রতি ভালোবাসা, তাঁর প্রতি অনুগত থাকলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব। সকল ধরনের বির্পযয় থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারি কেবলই রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের মাধ্যমে। মানব জীবনের সকল স্তরে যদি আল্লাহ নিদের্শিত এবং রাসূল (সা.) প্রদর্শিত নির্দেশাবলীর প্রতিফলন না ঘটে তবে তা হবে আনুগত্যহীন কাজ এবং তা এক পর্যায়ে মানুষকে কুফরির দিকে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, হে নবী! তাদেরকে বলুন, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো, তবে যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন লোকদের মহব্বত করবেন না যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে (সূরা আল ইমরান : ৩২) । অপর আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, হে নবী! লোকদের বলে দাও, যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দিবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়। তাদেরকে বলো, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো (সূরা আলে ইমরান : ৩১)। মাওঃ মুহাঃ ফজলুর রহমান আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য করার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর নির্দেশনা এসেছে কুরআনে কারিমে। নবী করিম (সা.)-এর কোনো ফয়সালা, নিয়মাবলী ও কার্যাবলীর ব্যাপারে সামান্যতম কোনো ভিন্নতার মনোভাব পোষণ করলে তারা মুমিন হিসেবে গণ্য হবে না। আল্লাহ বলেন, কিন্তু না, হে মুহাম্মদ! তোমার রবের কসম, এরা কখনও মুমিন হতে পারে না, যতক্ষণ এদের পারস্পরিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে এরা তোমাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে নেবে না, তারপর তুমি যা ফায়সালা করবে তার ব্যাপারে নিজেদের মনের মধ্যে যেকোনো প্রকার কুণ্ঠা ও দ্বিধার স্থান দেবে না, বরং সর্বান্তকরণে মেনে নেবে (সূরা আন নিসা : ৬৫)। যারা আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে ভালোবাসে, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা দেন তারা আল্লাহর দল, মনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহর দলের লোকেরাই সফল (সুরা মুজাদালাহ : ২২)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হরজত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু যে অস্বীকার করেছে সে ছাড়া। রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দলভুক্ত হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলকাম হই। দুনিয়াবি সকল বালা-মুসিবত থেকে রক্ষার পাথেয় হিসেবে আল্লাহর রাসূলের মুহাব্বতকে আঁকড়ে ধরি। মাহফিলে বায়তুল আমান জামে মসজিদের মুসল্লীসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা উপস্থিত ছিলেন। মাহফিলে দোয়া পরিচালনা করেন খুলনার গল্লামারী খানজাহান নগর কওমী মাদ্রাসা ও মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুফতি মাহমুদুর রহমান।
রাসূল (সঃ) এর আদেশ-নিষেধ অমান্য করলে সর্ব নিকৃষ্ট স্থানে আপতিত হতে হবে
প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪, ১৩:০২
Leave a Reply