(২য় পর্ব)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি মুমিনের ভালোবাসা

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ১৭:২৭

মাওঃ মুহাঃ ফজলুর রহমান :
মুমিনের জীবনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। মহব্বতে রাসূল তো ঈমানের রূহ, মুমিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। এই ভালোবাসা, মহব্বত ছাড়া না ঈমানের পূর্ণতা আসে, আর না তার স্বাদ অনুভূত হয়। আর নিছক ভালবাসাই যথেষ্ট নয়, বরং পার্থিব সমস্ত কিছুর উপর এই ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালবাসার প্রকাশ ঘটতে হবে। হযরত আনাস রা. বলেছেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হব। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫) এ শুধু নীতিবাক্য নয়; বাস্তবেই মুমিনকে পৌঁছাতে হবে নবীপ্রেমের এ স্তরে। সকলের উপর, সবকিছুর উপর প্রাধান্য দিতে হবে আল্লাহ-আল্লাহর রাসূলকে; এমনকি নিজের জানের উপরও। শুনুন ওমর রা.-এর ঘটনা আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম রা. বলেন- একদিন আমরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। নবীজী ওমর রা.-এর হাত ধরা ছিলেন। ওমর রা. বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে প্রিয়, তবে আমার জান ছাড়া। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না ওমর, এতে হবে না। যে সত্তার হাতে আমার জান তাঁর কসম! (ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না,) যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার জানের চেয়েও প্রিয় না হই। পরক্ষণেই ওমর রা. বললেন, হাঁ এখন তা হয়েছে; আল্লাহর কসম! (এখন থেকে) আপনি আমার কাছে আমার জানের চেয়েও প্রিয়। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ ওমর! এখন হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৩২) আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের ভালোবাসা যদি সবকিছুর উপরে না হয় তাহলে মুমিন পথ চলবে কীভাবে? আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আদেশের সামনে সমর্পিত হবে কীভাবে? আজ বাধা হবে সন্তান, কাল স্ত্রী, পরশু পিতা। কখনো বা জানের মায়ায় লংঘিত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ। আর মুমিন তো সেই, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মহব্বত ও নির্দেশের সামনে সবকিছু পিছে ঠেলতে জানে।বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক লিখেন- ‘উহুদ যুদ্ধ শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাগণ বাড়ি ফিরছিলেন। তারা যখন বনূ দীনার গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন এক মহিলার (ওয়াকিদীর বর্ণনা মতে যার নাম সুমাইয়া বিনতে কায়েস) সাথে তাদের সাক্ষাৎ হল যার স্বামী, ভাই ও পিতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথী হয়ে যুদ্ধ করতে করতে উহুদ ময়দানে শহীদ হয়েছিলেন। লোকেরা তাকে তাঁদের মৃত্যু সংবাদ শোনালেন। মহিলা বললেন, নবীজীর কী অবস্থা! তিনি বেঁচে আছেন তো? তারা বললেন, আপনি যেমন কামনা করছেন, আলহামদুলিল্লাহ তিনি ভাল আছেন! এবার মহিলা বললেন, তাহলে তাঁকে একটু দেখান, আমি তাঁর জ্যোতির্ময় চেহারা একটু দেখে নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ইশারা করে তাঁকে দেখানো হল। দেখা মাত্রই তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন- ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে সুস্থ পাবার পর সকল বিপদ আমার নিকট তুচ্ছ।’ অর্থাৎ এখন আর আমার মনে আমার স্বামী, ভাই ও পিতা হারানোর কোনো কষ্ট বা শোক নেই। আপনাকে সুস্থ পেয়ে সব কিছুই আমি ভুলে গেলাম। (আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/১৮১)

সহকারী প্রধান শিক্ষক, পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা, খতীব বায়তুল আমান জামে মসজিদ, চকমাথুরাবাদ,পিপড়ামারী, হরিণটানা, খুলনা।

Leave a Reply