(১ম পর্ব)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি মুমিনের ভালোবাসা

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪, ১৭:৩৬

মাও: মুহা: ফজলুর রহমান :
আরবি মাস সমূহের মধ্যে রবিউল আউয়াল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কেননা এ মাসে সাইয়েদুল আম্বিয়ায়ে ওয়াল মুরসালিন খাতামুন নাবীয়্যিন এ ধরাপৃষ্ঠে আগমন করেন। আবার এ মাসেই তিনি আল্লাহ প্রদত্ত রিসালাতের সকল দায়িত্ব পালন শেষে স্বীয় প্রভুর আহবানে সাড়া দিয়ে পরলোক গমন করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকগণের মাঝে অনেক মতভেদ রয়েছে।উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুফাসসির ও মুফতি জনাব শফি সাহেব (রহমতুল্লাহি আলাইহি) সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া গ্রন্থে লিখেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ। অপরদিকে আর-রাহীকুল মাখতুমের লেখক আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখেন, রাসুলের (সা.) জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখ। আবার কোন কোন ঐতিহাসিক বলেছেন, রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ। তবে সকল ঐতিহাসিক এ ব্যাপারে একমত যে, নবী করিম (সা.) রবিউল আউয়াল মাসেই জন্মগ্রহণ করেছেন। যদিও তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু এ মাসের ১২ তারিখ সোমবার রাসুল (সা.) ইন্তেকাল করেছেন এ ব্যাপারে কোন ঐতিহাসিকের মতভেদ নেই। নিঃসন্দেহে মহানবী (সা.) কে ভালবাসা এবং তার প্রদর্শিত পথ অনুযায়ী জীবন-যাপন করা ঈমানের অংশ। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারি (র.) বুখারি শরীফে স্বতস্ত্র একটি শিরোনাম এনেছেন। যার অর্থ ‘নবী (সা.) এর ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ’। বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আনাস (রাজিআল্লাহু তায়ালা আনহু) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেন, ঐ সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার নিকট নিজ নিজ পিতা-মাতা, সন্তান ও সকল মানুষ হতে প্রিয় না হই। (বুখারি) আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর জন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করল, আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষণ করল, আল্লাহর জন্য কাউকে দান করল এবং আল্লাহর (সম্পদ) ব্যয় করা থেকে বিরত থাকল, নিশ্চয়ই সে স্বীয় ঈমানকে পরিপূর্ণ করল । (তিরমিজি ও আবু দাউদ),হাদিসের বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ভালবাসাকে অপরাপর ভালবাসার উর্ধ্বে স্থান দেয়া এবং শত্রুতা ও মিত্রতায় আল্লাহ ও তার রাসুলের হুকুমের অনুগত থাকা ঈমানের পূর্ণতা লাভের পূর্বশর্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, (হে নবী)! আপনি বলুন, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা-মাতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই-বোন, তোমাদের বংশ, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের এমন ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ কর; আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল এবং তার রাস্তায় জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় না হয়, তাহলে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। (সুরা তওবা, আয়াত ২৪)
আয়াতের মর্ম হলো যারা দুনিয়াবি সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়ে আল্লাহ ও তার রাসুলের সম্পর্ককে উপেক্ষা করেছে তাদের করুণ পরিণতির দিন সমাগত। দুনিয়ার মধ্যেই সে আজাব আসতে পারে। তবে আখেরাতের আজাব অবশ্যই ভোগ করতে হবে।
উল্লেখিত আয়াতে সকল মুসলিমের প্রতি এ আদেশ দেয়া হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালবাসা এমন উন্নত স্তরে রাখা ওয়াজিব, যে স্তরে অন্য কারো ভালবাসা স্থান পায় না। তাই যার ভালবাসা এ স্তরে নেই সে শাস্তির যোগ্য। তাই মুসলিমগণ আন্তরিকভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি পরিপূর্ণ সম্মান ও ভালবাসাকে ওয়াজিব মনে করে। নিচে এ বিষয়ে কতিপয় নির্দেশনা উল্লেখ করা হল। ১. রাসুল (সা.) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর অত্যাবশ্যক করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা কোন ব্যাপারেই আল্লাহ ও তার রাসুলের সামনে অগ্রণী হয়ো না। (সুরা হুজুরাত : আয়াত ১) এ আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, রাসুল (সা.) এর অবর্তমানে তাঁর আনীত শরিয়ত ও আল্লাহর হুকুমের সামনে কারো কোন মত বা পথ গ্রহণযোগ্য হবে না। ২. আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের ওপর রাসুল (সা.) এর আনুগত্য ও ভালবাসাকে ফরয করে বলেন, (হে নবী!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার আনুগত্য কর। ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১) যার আনুগত্য করা ওয়াজিব তার বিরোধিতা বা অবাধ্যতা করা হারাম। সমস্ত কাজে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আবশ্যক। ৩. আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.) কে নেতা ও বিচারক রূপে পাঠিয়েছেন। এ মর্মে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব নাজিল করেছি, যাতে আপনি সে অনুসারে মানুষের মাঝে বিচার মিমাংসা করেন যা আল্লাহ আপনাকে জানিয়েছেন । (সুরা আন নিসা, আয়াত ১০৫) ৪. আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুলের মহব্বতকে ফরজ করে দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ আমি তাঁর পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ হতে অতি প্রিয় না হই। (বুখারি শরিফ) । যাকে ভালবাসা ওয়াজিব, তাকে সম্মান করাও ওয়াজিব।

সহকারী প্রধান শিক্ষক, পশ্চিম বানিয়া খামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা, খতিব বায়তুল আমান জামে মসজিদ, চকমাথুরাবাদ,পিপড়ামারী, হরিণটানা খুলনা।

Leave a Reply