যশোর সিটি ক্যাবলপ্রাঃলিঃমানছে না হাইকোর্টের নির্দেশ

প্রকাশিতঃ নভেম্বর ৬, ২০২৪, ২১:২৫

 যশোর অফিস : যশোর সিটি ক্যাবল প্রাইভেট লিমিটেডের কার্যক্রম মনগড়া আইনে পরিচালিত হচ্ছে। হাইকোর্টের নির্দেশকেও তোয়াক্কা করছে না প্রতিষ্ঠানটির কতিপয় শেয়ার হোল্ডার। একটি রিট পিটিশন মামলার রায়ে হাইকোর্টের মহামান্য বিচারক কোম্পানি আইন ভেঙ্গে গঠিত আহবায়ক কমিটি বাতিল, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চলতি বছর পর্যন্ত অডিট করা ও এজিএম’র মাধ্যমে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন কিন্তু রায় বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বাতিল করা আহবায়ক কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

জানা যায়-যশোর সিটি ক্যাবল প্রাইভেট লিমিটেড ২০০৩ সালে ২০ জন শেয়ার হোল্ডার নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় অফিস কোম্পানি আইনে রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত হয়। কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন পাওয়ার পর ১৯৯৪ সনের কোম্পানি আইনের ধারা ৮১(২) তৎসহ ৮৫(৩) ও ৩৯৬ ধারা অনুসারে পরিচালিত হয়নি।২০ জন নিয়ে যাত্রা শুরুর পর আরও ৩২ জনকে অনিয়ম পন্ন্থায় শেয়ারহোল্ডার করা হয়েছে। শেয়ার কেনা-বেচার ক্ষেত্রে মানা হয়নি কোম্পানি আইন। কোম্পানি আইনে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও অডিট করা বাধ্যতামূলক হলেও প্রতিষ্ঠানটি তার ধারের কাছেও যায়নি। আইনের তোয়াক্কা না করলেও প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। টানা দুই দশকে শেয়ার দাঁড়িয়েছে ৪ কোটিতে। তবে সরকার পায়নি রাজস্ব। যা রিট মামলায় প্রমাণিত হওয়ায় হাইকোর্টের মহামান্য বিজ্ঞ বিচারক কিছু শর্তসাপেক্ষে একটি যুগান্তকারী রায় দেন চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর। রায় ঘোষণার ১২০ দিনের মধ্যে নির্দেশনা কার্যকর করার আদেশ দেন মহামান্য বিচারক।

জানা যায়-প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর আহবায়ক কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন মামলা করেন। বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে দায়ের করা মামলায় তিনি দাবি করেন-মূল শেয়ার হোল্ডারদের কয়েকজনের আপত্তি থাকা সত্বেও একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেছে কতিপয় শেয়ার হোল্ডার। তিনি ভুল স্বীকার করে বলেন-২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রতিবছর অডিট করানো ও এজিএম’র মাধ্যমে কমিটি করা বাধ্যতামূলক হলেও গত দুই দশকে তার কিছুই হয়নি। এরফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়-রিট পিটিশন মামলার শুনানি শেষে চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী। রায়ে কোম্পানি আইন মেনে ১২০ দিনের মধ্যে বৈধ শেয়ার হোল্ডারদের নিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সাথে রেজিস্ট্রিশনের সময় যে ২০ জন শেয়ার হোল্ডারের নাম উল্লেখ রয়েছে, শুধুমাত্র তারা এজিএমে অংশ নিতে পারবেন বলে বলা হয়েছে। অবৈধপন্থায় যাদের শেয়ারহোল্ডার করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম থেকে তাদের বিরত থাকারও নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের মহামান্য এই বিচারক। রায়ে বেশকিছু শর্তারোপ করেন মহামান্য বিচারক। তারমধ্যে রয়েছে-পে-অর্ডার আকারে ইছামতি-২ (৭বি) ভবন পরিচালনার জন্য দুই লাখ এবং বৃক্ষ রোপণের জন্য নিরান্টর ইনিশিয়েটিভ ট্রাস্টে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে। এরমধ্যে রায় ঘোষণার দেড় মাস অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে মীর মোশাররফ হোসেন জানান-প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরুর পর কোম্পানি আইন মেনে পরিচালিত হয়নি। অনিচ্ছাকৃত এই ভুল বুঝতে পেরে শেয়ার হোল্ডারদের সাথে অনেকবার কথা বলেছি কিন্তু গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এরফলে শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে যেমন সম্পর্কের টানাপোড়েন  শুরু হয়, তেমনি সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেকারণে আদালতের শরণাপন্ন হই। চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের মহামান্য বিচারক যে রায় দিয়েছেন, তাতে আমি খুশি। তবে রায় কার্যকরে বাতিলকৃত আহবায়ক কমিটির কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না।

Leave a Reply