বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) রোকেয়া হলে ক্যান্টিন চালু

ভয়েজ ডেস্ক : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বেগম রোকেয়া হলে ডাইনিং বন্ধ করে এর পরিবর্তে চালু হয়েছে ক্যান্টিন ব্যবস্থা। হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) থেকে ক্যান্টিন চালুর এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে হল প্রশাসন।

এদিকে, প্রথমবারের মতো নেওয়া এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্বাস্থ্যসম্মত ও সাশ্র‍য়ী খাবার পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, খাবারের সমস্যার পাশাপাশি হলে থাকা সব বৈষম্য দূর করে নতুনভাবে হল সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যহীন নিরাপদ হল গড়ে তুলতে হলের ভিতরে রাজনীতি, সিট বাণিজ্য, গেস্টরুম কালচার ও র‍্যাগিং চিরতরে বন্ধ ঘোষণা করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে হল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন তারা। শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে হল প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একে একে ক্যান্টিনে এসে খাবার নিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করা মূল্যে সরবরাহ করা হয় খাবার।

ক্যান্টিনের প্রধান বাবুর্চি মো. আব্দুল হালিম বলেন, দুপুর ও রাতের খাবারে থাকছে পোলাও-রোস্ট (শুধু শুক্রবার), ভাত, শাক, সবজি, চপ ও আলু ভর্তা। এছাড়া মাছ রান্না এবং মাছ ভাজির ব্যবস্থাও থাকছে। ডাল ও সালাদ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি সুবিধা। মুরগির মাংস, শুটকি মাছ, ডিম ভাজি এবং ভিম ভুনার ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়াও একটি সমন্বিত প্যাকেজ আকারেও খাবার নেওয়ার মতো সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

সকাল ও বিকেলের নাস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, সকালে নাস্তায় থাকছে পরোটা, রুটি, খিচুড়ি, ডাল-সবজি, ডিম সিদ্ধ, ভাজি, মিষ্টি হালুয়া ও চা। বিকেলের নাস্তার বৈচিত্র্যময় তালিকায় থাকছে নুডলস, সিঙ্গারা, পুরি, আলুর চপ, পেঁয়াজু ও বেগুনী, ডিম চপ ও চটপটি।

হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যান্টিনটি হল প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হবে। তবে মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা, যা ক্যান্টিনের সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। শুক্রবার অন্তত ২৫০ জন শিক্ষার্থী ক্যান্টিনে খাবার নিতে এসেছেন, যা নতুন এ ব্যবস্থার প্রতি তাদের আগ্রহেরই প্রমাণ।

খাবার নিতে আসা শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই চাচ্ছিলাম যে বেগম রোকেয়া হলে ক্যান্টিন ব্যবস্থা চালু করা হোক। অবশেষে আমরা এখন আমাদের পছন্দমতো খাবার নিতে পারছি। ডায়নিংয়ের সেই বাধা তালিকার একই খাবার প্রতিদিন খেতে হচ্ছে না। তবে ক্যান্টিনকে আরেকটু উন্নতমানের করে নতুনভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন।

হলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাইশা মাহফুজ হৃদি বলেন, রোকেয়া হল একটি বড় পরিবার। এতোদিন হলে যে বৈষম্যের শিকার আমরা হয়েছি, স্বাধীন দেশে আর কেউ এর সম্মুখীন হোক সেটা চাই না। এর বিরুদ্ধে আমরা সবাই একত্রে কাজ করে যাচ্ছি। এক অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেভাবে সবাই রুখে দাঁড়িয়েছি, আবার কোনো রাজনৈতিক দল এ হলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একইভাবে দমন করবে। আগামী জুনিয়রদের কাছে রোকেয়া হল যেন এমটি নিরাপদ হল হয়, সে লক্ষ্যে সবাই একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। পরিবর্তনটা হোক আমাদের হাত ধরে।