আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের আন্দোলনকে আল্টিমেটাম দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক প্রকার হুঙ্কারের সুরে তিনি বলে দিলেন, এটাই আমার শেষ চেষ্টা, এরপর আমি আর আসব না।
তবে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা তাদের ৫ দফা দাবি আদায়ে অনড় রয়েছেন। যদিও আলোচনায় বসতে প্রস্তুত চিকিৎসকরা। কিন্তু বৈঠকের সরাসরি (লাইভ) সম্প্রচার হবে কি না, এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন শিক্ষানবিশরা।
৩৬ দিন ধরে আন্দোলনে রয়েছেন ২৬টি মেডিকেল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরা। গত ৯৬ ঘণ্টা ধরে তারা দিনরাত অবস্থান করছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে। সেই অবস্থানে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আচমকা পৌঁছে যান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আসিনি, আপনাদের দিদি হিসেবে এসেছি। ১৭ তারিখ (সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে শুনানি আছে। আমি চাই না আপনাদের ক্ষতি হোক। কাজে ফিরুন, আপনারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। এটাই আমার শেষ চেষ্টা, ভরসা করলে বিচার পাবেন।
মমতা আরও বলেন, আপনারা ঝড়জল মাথায় নিয়ে পথে বসে আছেন। আমিও রাতে ঘুমাতে পারছি না। আমারও কষ্ট হচ্ছে। আমি আপনাদের কাছে বলতে এসেছি—অনেক কষ্ট করেছেন, আর কষ্ট না করে আপনারা কাজে ফিরে যান। আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আপনাদের ডিমান্ডগুলো আমি সহানুভূতির সাথে দেখব। কারণ আমি একা সরকার চালাই না, আমি সবার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। আপনাদের ডিমান্ডগুলো আমি ভাবব, চিন্তা করব। যদি কেউ দোষী হয়, তিনি নিশ্চয়ই শাস্তি পাবেন। আমি চাই সিবিআই তিন মাসের মধ্যে বিচার শেষ করে অপরাধীদের ফাঁসি দিক। আপনাদের জন্য এটাই আমার শেষ চেষ্টা।
মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো জানান, তাদের প্রতিবাদ-আন্দোলন যে স্পিরিটে চলছিল, সেভাবেই চলবে। তবে তারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের ৫ দফা দাবি নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি।
আন্দোলনকারীদের তরফে অনিকেত বলেন, এই ৫ দফা দাবির সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়। মুখ্যমন্ত্রী অভিভাবকের মতো কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেন অনিকেত।
মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানান জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে তারা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা আলোচনায় বসতে চান, মুখ্যমন্ত্রী যখন ডাকবেন, তখনই। মুখ্যমন্ত্রীর এই ভূমিকাকে তারা সদর্থক দেখছে এবং স্বাগত জানাচ্ছে। কিন্তু তাদের পাঁচ দফা যে দাবি, তাতে কোনো সমঝোতা করবেন না।
আন্দোলনকারীদের পাঁচ দফা দাবি হলো—
১। আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় জড়িত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
২। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার।
৩। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা।
৪। রাজ্যের সব মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।
৫। রাজ্যের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা।
গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টম্বর) এই দাবি নিয়েই প্রশাসনিক ভবন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন বৈঠকের সরাসরি (লাইভ) সম্প্রচার করতে দেননি মমতা। তাই আন্দোলনকারীরা বৈঠক করেননি। চিকিৎসকদের দাবি, বদ্ধ ঘরে কী হচ্ছে, তা দেশবাসীর জানা উচিত। কারণ, এই আন্দোলনে তারাও পরোক্ষভাবে সামিল রয়েছেন।
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছেন, চিকিৎসকরা কাজে যোগ না দিলে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে রাজ্য সরকার। ফলে শনিবার মমতার এই বক্তব্যের পর পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তাই এখন দেখার।
Leave a Reply