ভয়েজ ডেস্ক : সারা দেশের মতো দিনাজপুরের হিলিতে গত কয়েকদিন ধরেই লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেকটা বেড়েছে। দিনে ও রাতে সমানতালে চলছে লোডশেডিং। এ ছাড়া গত কয়েকদিন ধরে চলা তীব্র গরমের মাত্রা বাড়ায় গুদামে পচে নষ্ট হচ্ছে আমদানি করা পেঁয়াজ। বাছাই করা কিছু পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করলেও কিছু কিছু পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার যেগুলো পচে যাচ্ছে সেগুলো ফেলে দিতে হচ্ছে। এতে করে পেঁয়াজ আমদানি করে লোকসানের মুখে পড়েছেন আমদানিকারকরা।
হিলিতে পেঁয়াজ কিনতে আসা নুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা হিলি স্থলবন্দরের বিভিন্ন আমদানিকারকদের গুদাম থেকে পেঁয়াজ কিনে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করে থাকি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরেই অতিরিক্ত গরমের কারণে পেঁয়াজের মান খারাপ হচ্ছে। আমরা গুদাম থেকে বাছাই করে পেঁয়াজভর্তি বস্তা কিনে করে নিয়ে যাই। বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রতিবস্তা থেকে ২ থেকে ৩ কেজি করে পচা পেঁয়াজ বের হচ্ছে। এতে করে আমাদের তো ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, লাভের আশায় পেঁয়াজ কিনে বস্তাপ্রতি যদি ২-৩ কেজি করে পচা পেঁয়াজ ফেলে দিতে হচ্ছে। যেখানে গচ্চা যাচ্ছে দুশ থেকে আড়াইশ। এতে করে বর্তমানে পেঁয়াজ কেনাবেচা করতে গিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’
অপর পেঁয়াজ ক্রেতা সাইদুর রহমান বলেন, ‘ঘর থেকে আমরা ভালো পেঁয়াজ দেখে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছি কিন্তু গরমের কারণে অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে আমরা যে দামে কিনছি সে দামে আর বিক্রি করতে পারছি না। আবার অনেক পেঁয়াজ বাজারজাত করাও যাচ্ছে না। ফেলে দিতে হয়। এতে আমাদের পেঁয়াজের ব্যবসার পুঁজি হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আব্দুস ছালাম বলেন, ‘দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু আমদানি করে এখন আমাদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। ভারতের মোকাম থেকে পেঁয়াজ বন্দরে আসা পর্যন্ত ৪-৫ দিন সময় লাগে। এতে করে গরমের মধ্যে গাড়িতে ত্রিপলবন্দি অবস্থায় থাকায় পেঁয়াজের কিছুটা মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে। দেশে আসার পর গরমে অন্য এক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই গরমের তীব্রতা অনেক বেশি। তার ওপর বিদ্যুৎ ঠিকমতো থাকছে না। সারা দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। পেঁয়াজ তো পচনশীল পণ্য গরমে দ্রুত পচে নষ্ট হয়ে যায়। গুদামঘরে ফ্যান লাগিয়ে কিছুটা বাঁচানোর চেষ্টা চলছে কিন্তু ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব কারণে এখন পেঁয়াজ আমদানি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। কিছু পেঁয়াজ ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা গেলেও অন্যগুলো ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। বাকি যেগুলো পচে যাচ্ছে সেগুলো ফেলে দিতে হচ্ছে। বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানি করে কম দামে বিক্রির ফলে দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারী হয়ে উঠছে।’
দিনাজপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২-এর হিলি সাব-জোনাল অফিসের এজিএম বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ‘হিলিতে পিক আওয়ারে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৮ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে আমরা বরাদ্দ পাচ্ছি মাত্র ৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। অফপিক আওয়ারে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৫ দশমিক ৫ মেগাওয়াট, বিদ্যুৎ পাচ্ছি ওই একই বরাদ্দ ৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। মূলত বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে।’
Leave a Reply