গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি বিলুপ্তির পথে

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪, ১১:৫৬

লাইফস্টাইল : ‘একি গাড়িয়াল ভাই কত রব। আমি গন্ধের পানে চাইয়া রে’- এ্যাম-বাংলার প্রাণপ্রিয় এই গানটি যেমন এখন আর শোনা যায় না, তেমনি গ্রাম-বাংলার একটি জনপ্রিয়। যান ঘোড়া ও গরু এবং মহিষের গাড়িও এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না। হারিয়ে গেছে গাড়িয়াল পেশাও। এখন আর খুলনার পাইকগাছায় আগের মতো চোখে পড়ে না ঘোড়া, গরু আর মহিষের গাড়ি। যা এক সময় পাইকগাছার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া ও গরু আর মহিষের গাড়ি বাহনের সরগরম অস্থিত্ব ছিল। ছিল সর্বত্র এই গরু আর মহিষের গাড়ির কদর। কি বিয়ে, কি অন্য কোন উৎসবে ঘোড়া ও গরু এবং মহিষের গাড়ি ছাড়া যেন কল্পনাই করা যেত না। আমাদের পল্লী এলাকার জনপ্রিয় বাহন ছিল- ঘোড়া আর মহিষের গাড়ি। বিশেষ করে পাইকগাছা অঞ্চলের কৃষি ফসল বহন ও মানুষ বহনের প্রিয় বাহন ছিল দু-চাকার এই গরু আর মহিসের গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে এই বাহন এখন হারিয়ে যাচ্ছে।

পাইকগাঋা উপজেলা সহ আশেপাশে গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ঘোড়া ও গরু এবং মহিষের গাড়ি এখন অধিকাংশ এলাকা থেকে বিলুপ্তির পথে। এখন এসব বাহন রূপকথার গল্পমাত্র, বাংলা নববর্ষ পালনের সময় দুচ্চারটা ঘোড়া, গরু মহিষের গাড়ী দেখা গেলেও সেটা বিলুপ্ত হতে হতে স্থান পেয়েছে সংবাদপত্র ও বইয়ের পাতায়। আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া, গরু ও মহিষের গাড়ি হারিয়ে গেছে। সে কারণে পাইকগাছার গরু কিংবা মহিষের গাড়ির শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। আবার অনেক শহরে শিশু গরু আর মহিষের গাড়ি দেখলে বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করে গরুর
তবে যুগ যুগ ধরে কৃষকের কৃষি ফসল বলন ও বহনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে পরিচিত ছিল ঘোড়া, গরু আর মহিষের গাড়ি। গরু গাড়ি দুই চাকাবিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা এক প্রকার বিশেষ যান। অপরদিকে মহিষও দু’চাকাবিশিষ্ট বিশেষ যান যা অপরুপের বাহার। এ যানে সাধারণত একটি মমত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ ও ঘোড়া এবং মহিষ বৃটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে। এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের স্থানীয় এক বাসিন্দা করিম গাজী বলেন, সাধারণত চালক
বসতেন গাড়ির সামনের দিকে। আর পেছনে বলেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পেছন দিকে। বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে ঘোড়া, গরু ও মহিষের গাড়ির প্রচলন ছিল ব্যাপক। গ্রাম বাংলায় নীতিহ্যগতভাবে ঘোড়া, গরু ও মহিসের পড়ি দু দশক আগেও যাতায়াত ও মালবহনের কাজে ব্যবহৃত হতো। এবিষয়ে পাইকগাছা উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের স্থানীয় এক বাসিন্দা গাজী বাবুল রহমান বলেন, আমিও ঘোড়ার গাড়িতে করে বিয়ে করেছি এবং দুই যুগ কিংবা এক যুক আগে ঘোড়া, গরু ও মহিষের গাড়িতে চড়ে বর-বধু যেত। গরু কিংবা ঘোড়া ও মহিষের গাড়ি ছাড়া বিয়ে হতোই না। বিয়ে বাড়ি বা মাল পরিবহনে গরু আর মহিষের গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন বাহন। বরপক্ষের লোকজন বরযাত্রী ও ডুলিবিবিরা বিয়ের জন্য ১০ থেকে ১২টি গরু না হয় মহিষের গাড়ির ছাওনি (টাপর) সাজিয়ে শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ি আসা-যাওয়া করত। রাস্তাঘাটে গরু কিংবা মহিষের গাড়ি থেকে পটকাও ফুটাত।
তিনি আরও বলেন, তখন যে সব পরিবারে গরু গাড়ি ছিল, তাদের কদরের সীমা ছিল না। কৃষকরা প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে গরু নচেৎ মহিষের গাড়িতে কখনো জৈব সার তথা গোবরের সার, কখনো গরুর খাবার ও লাঙ্গল-মই-জোয়াল নিয়ে যেত মাঠে। গাইত উঁচু সুরে গাইত, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রবো আমি পন্থের পানে চাইয়া । এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের কাসিমনগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আতিয়ুর রহমান বলেন, তখন গরুর গাড়ির চালককে বলা হতো গাড়িওয়াল। আর তাই চালক উদ্দেশ্য করে বলত, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, আস্তে চালাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিবার নাও ্ বিষয়ে আরও বলেন, তখনকার সময় পাইকগাছার অনেক এলাকার রাস্তা পাকা না থাকায় যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করত না। ফলে ঘোড়া, গরু ও মহিষের গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বর্তমানে টলি, ভ্যান, টেম্পু, নসিমন, আটো, ইঞ্জিন চালিত যন্ত্র, পরিবহন করিমনসহ নানা ধরনের ব্যাটারি ও স্যারো ইঞ্জিন চালিত মোটরযান চলাচলের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার একেবারেই কমে গেছে ও এখন আর আমাদের চোখে পড়ে না।

Leave a Reply