ভয়েজ ডেস্ক : খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহযোদ্ধা মোঃ কদরুল হাসানের সন্ধানের দাবি জানিয়েছে তার পরিবার ও শিক্ষার্থীরা। সহযোদ্ধা কদরুলকে ফিরে পেতে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়েছে। সোমবার বিকেলে নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে খুলনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধন ও সমাবেশে এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর ময়লাপোতা মোড় এলাকায় ত্রাণের কার্যক্রম করছিলেন। রাত থেকে তিনি নিখোঁজ। চারদিনেও তার কোন খোঁজ মেলেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাঁর কোন সন্ধান দিতে পারেনি। তারা চেষ্টা করলে, সঠিক তদন্ত করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কদরুল হাসান ভাইকে ফেরত দিতে পারে। আমরা অবিলম্বে আমার ভাইকে ফেরত চাই।
প্রশাসনের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, যখন আমরা আন্দোলন করছিলাম তখন আমাদের ভাইদের ঘর থেকে তুলে এনেছিলেন। অথচ এখনও কদরুল হাসান ভাইকে ফিরিয়ে দিতে পারেননি। তাকে খুঁজে না পাওয়া প্রশাসনের জন্য চরম ব্যর্থতা। কদরুল হাসানকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আপনাদের ঘুম হারাম করতে হবে। যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, যতো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন আপনারা আপনাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করুন। এটা কোন তামাশার বিষয় নয়, স্বাধীন বাংলাদেশে আমার ভাই কেন নিখোঁজ থাকবে? শেখ হাসিনা স্বৈরাচারি যে সংস্কৃতি সৃষ্টি করে দিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশে সেই একই সংস্কৃতি কেন পুনর্বহাল হবে? তার জবাব প্রশাসনকে দিতে হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কদরুল ভাইকে খুঁজে বের করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা শুধু স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বিদায় করতে পেরেছি। তার যে দোসররা রয়েছে, তাদেরকে আমরা উৎখাত করতে পারিনি। শেখ হাসিনাকে যেভাবে বিদায় করেছি, তার দোসরদের এই ছাত্র-জনতা বিদায় করবে- ইনশাআলাহ।
প্রশাসন ও সরকারের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, আর কোন খুন, গুম, নির্যাতন, অত্যাচার, নিখোঁজ বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। ২৪ ঘন্টার মধ্যে কদরুল ভাইকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। এর জন্য কোথায় যাবেন, কি করবেন এ ধরনের কোন প্রশ্নের উত্তর আমরা শুনতে চাই না। কদরুল ভাইকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেখতে চাই। পরবর্তীতে মানববন্ধন নয়, সরাসরি এ্যাকশনে যাবো আমরা।
নিখোঁজ কদরুল হাসানের স্ত্রী সাঈদা খাতুন বলেন, আমার স্বামী কদরুল হাসান শেখ হাসিনা ও আ’লীগ সরকারের পতনের জন্য চেষ্টা করেছে। তার সঙ্গে দুই বছরের শিশুটিও বলেছে বাবা স্বাধীনতা চাই, দেশ স্বাধীন চাই। আমরা দেশ ও সমাজকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমি আমার স্বামী এবং সন্তানের বাবাকে ফেরত পেতে চাই। আপনারা আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এ সময় নিখোঁজ কদরুল হাসানের স্ত্রী-সন্তান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ও বক্তৃতা করেন তার বড় ভাই আব্দুলাহ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহাদ, আজাদ, মিনহাজ, রাহাত, রাফসান, যুবায়ের, মুহিব প্রমুখ।
উলেখ্য, নিখোঁজ কদরুল হাসান নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সোনার বাংলা গলির বাসিন্দা। তার স্থায়ী ঠিকানা খুলনার তেরখাদা থানাধীন বিরি আজগড়া। সে নগরীর সোনাডাঙ্গার সোনার বাংলা গলিতে ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। কদরুল হাসান নগরীর খালিশপুরস্থ সরকারি হাজী মোহাম্মদ মুহসীন কলেজের ছাত্র। পাশাপাশি নগরীর শেখপাড়া পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পার্ট টাইম চাকুরি করেন। সা¤প্রতিক ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন অগ্রসেনানী হিসেবেও তার ভূমিকা ছিল অনন্য। বিশেষ করে স¤প্রতি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠিত ত্রাণ সংগ্রহের কাজেও রাত-দিন পরিশ্রম করে নগরীর ময়লাপোতা এলাকায় কাজ করেছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টার দিকে বাসা থেকে বের হন। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার সঙ্গে তার স্ত্রীর মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান যে, আমি বন্যার্তদের ত্রাণের কাজে ব্যস্ত আছি। খুব দ্রুত বাসায় ফিরবো। পরবর্তীতে সে বাসায় ফেরেনি। রাত ১১টার দিকে তাকে ফোন দিলে ১ বার তার নম্বর খোলা ছিল। কিন্তু ফোন রিসিভ করে না। তার পর থেকে নম্বর বন্ধ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি। এ বিষয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রথমে কেএমপির সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় ও খুলনা সদর থানায় পৃথক দু’টি সাধারণ ডায়েরি জিডি করা হয়।
Leave a Reply