(দ্বিতীয় পর্ব)
ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত বা পরনিন্দা

প্রকাশিতঃ নভেম্বর ২৮, ২০২৪, ১৩:৪৫

মাও. মুহা. ফজলুর রহমান : আল্লাহ তায়ালা বলেন-তোমাদের কেউ যেন একে অপরের গীবত না করে। তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করবে যে, সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে?তোমরাতো এটা অপছন্দ কর। কাজেই আল্লাহকে ভয় কর। আর যদি গীবতের গোনাহে জড়িয়ে পড়ে থাক তাহলে তওবা করে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তওবা কবুলকারী, দয়ালু। (সূরা হুজুরাত-১২)। রাসূল (সাঃ)-এর জামানায় দু’জন মহিলা রোযা রেখে খুব কাতর হয়ে পড়ল, তাদের অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে দাঁড়াল। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সাঃ)কে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূল (সাঃ) তাদের কাছে একটা পেয়ালা পাঠিয়ে দিলেন যে, এই পেয়ালায় যেন তারা বমি করে। বমি করলে দেখা গেল যে, তাতে গোশতের টুকরা এবং তাজা রক্ত পড়েছে। রাসূল (সাঃ) বললেন যে, তারা গীবত তথা পরনিন্দা করেছে, তাই তাদের এই দুরাবস্থা হয়েছে। কোন মুসলমানের গীবত করার অর্থ হল তার মাংস চিবিয়ে খাওয়া, যা কুরআনে বলা হয়েছে। এটা যে বাস্তব, অমূলক নয় – এটা প্রমাণ করার জন্যই হয়তো আল্লাহ পাক এ ঘটনা ঘটিয়ে দেখিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) বলেছেন- এই গীবত করার কারণেই তাদের রোযায় কষ্ট হচ্ছে। এ থেকে বোঝা গেল – কোন ইবাদত যদি সহীহ তরীকায় করা না হয়, তার মধ্যে যদি গলতী এসে যায়, তাহলে সেই ইবাদতে কষ্ট হয়। রোযার যে সহীহ্ তরীকা ছিল, ঐ মহিলারা সেই সহীহ্ তরীকায় রোযা রাখেনি, তারা রোযার মধ্যে গলতী করেছে অর্থাৎ, গীবত তথা পরনিন্দা করেছে, তাই তাদের রোযায় কষ্ট হয়েছে। আরও অনেক সাহাবী রোযা রেখেছিলেন, তারাতো কেউ কষ্টের অভিযোগ করেননি। তাঁরা সহীহ তরীকায় রোযা রেখেছেন বলে তাদের রোযায় কোন কষ্ট হয়নি। অভিজ্ঞতায়ও দেখা যায় রোযায় মুত্তাকী পরহেযগার মানুষের কোন কষ্ট হয় না, ফাসেক ফাজেরদের কষ্ট হয়।আমরা যত ইবাদত করি, অনেক সময় খুব কষ্ট লাগে। নামায পড়তে কষ্ট লাগে, রোযা রাখতে কষ্ট লাগে, কুরআন তেলাওয়াত করতে কষ্ট লাগে। ইত্যাদি যত রকম ইবাদত আছে সেগুলো করতে কষ্ট লাগে। এর একটাই কারণ আমরা ইবাদত সহীহ্ তরীকায় করি না। প্রত্যেকটা ইবাদতকে যদি সহীহ্ তরীকায় করতাম অর্থাৎ, যেভাবে করা কাম্য সেভাবে করতাম, তাহলে তাতে কোন কষ্ট বোধ হত না বরং আরাম বোধ হত। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন : যখন মে’রাজের সময় আমাকে আসমানে তুলে নেয়া হয়, তখন আমি এমন এক দল লোকের কাছ দিয়ে অতিক্রম করি, যাদের নখ ছিল তামার, তারা নিজেদের নখ দ্বারা নিজেদের চেহারা ও সীনা খামছে খামছে ছিড়ছিল। আমি হযরত জিব্রাঈল (আঃ)কে জিজ্ঞাসা করলাম এরা কারা? তিনি বললেনঃ এরা ঐ সমস্ত লোক, যারা মানুষের গোশত খেত অর্থাৎ, মানুষের গীবত তথা পরনিন্দা করত এবং মানুষের ইজ্জতের উপর হামলা করত। গীবতের ক্ষতি হল – যারা গীবত করে, তাদের দু’আ কবুল হয় না। তাই গীবত বর্জন করতে হবে। গীবত করলে যার গীবত করা হয় তার আমলনামায় গীবতকারীর ছওয়াব চলে যায় এবং তার গোনাহ গীবতকারীর আমলনামায় চলে আসে। গীবতের আর একটা ক্ষতি হল -গীবত করলে যার গীবত করা হয় তার আমলনামায় গীবতকারীর ছওয়াব চলে যায়, এ জন্যেই হযরত হাছান বসরী (রহঃ) যার নাম আমরা অনেকে শুনেছি। তিনি অনেক বড় বুযুর্গ ছিলেন। তিনি কখনও যদি শুনতেন যে, অমুকে আমার গীবত করেছে, তাহলে তার কাছে প্লেট ভরে ফল-ফ্রুট, মিষ্টি মিঠাই হাদিয়া পাঠিয়ে দিতেন। তিনি বলতেন মাশাআল্লাহ তিনি আমার অনেক উপকার করেছেন, এত কষ্ট করে ছওয়াব অর্জন করে তিনি আমাকে সেই ছওয়াব দিয়ে দিয়েছেন। তাই তার উদ্দেশ্যে মিষ্টি পাঠিয়ে দিতেন । বোঝা গেল নিজের দু’আ কবূল করার স্বার্থে এবং নিজের ছওয়াব হেফাযত করার স্বার্থে গীবত থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। গীবত বর্জন করা ছাড়া আল্লাহ ওয়ালা হওয়া কঠিন।

সহকারী প্রধান শিক্ষক, পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা, খতিব বায়তুল আমান জামে মসজিদ,  চকমাথুরাবাদ ,পিপড়ামারী, হরিণটানা, খুলনা।

Leave a Reply